কাশ্মীরে তরুণদের তুলে এনে বেদম মার নিরাপত্তা বাহিনীর, বলছে বিবিসি

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-র একটি প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় রাতে অভিযান চালিয়ে তরুণদের ধরে বেদম মার, এমনকি বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার পন্থা নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪৪
Share:

মারের দাগ কাশ্মীরি তরুণের শরীরে। ছবি বিবিসি-র সৌজন্যে

শুক্রবারের নমাজ ও জমায়েতকে ‘শান্তিপূর্ণ’ রাখতে ফের চলাফেরায় কড়া বিধিনিষেধ ফিরল শ্রীনগর ও কাশ্মীরের অন্যত্র। প্রধান প্রধান মসজিদগুলোয় এ দিনও জমায়েত করতে দেয়নি প্রশাসন। ছোট মসজিদগুলিতে পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে মসজিদে ঢুকতে দেওয়া হয় স্থানীয়দের। তবে পরিচয়পত্র সঙ্গে না নিয়ে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদেরও পরে মসজিদে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। কোনও বড় বিক্ষোভ না হলেও শ্রীনগরের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ও ছররা বন্দুক ছুড়ে, লাঠি চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করেছে। বিকেল চারটের পরে বিধিনিষেধ শিথিল করে প্রশাসন। সম্প্রতি সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গুলিতে শ্রীনগরে এক দোকানদারের মৃত্যুর পরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিও দেখা গিয়েছে।

Advertisement

তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-র একটি প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় রাতে অভিযান চালিয়ে তরুণদের ধরে বেদম মার, এমনকি বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার পন্থা নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রশাসন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সেনাবাহিনীর তরফে লিখিত ভাবে বিবিসি-কে বলা হয়েছে, জওয়ানেরা কোনও স্থানীয়কে মারধর করেনি। তেমন কোনও অভিযোগও তাদের কাছে আসেনি। বিবৃতিতে বলা বয়েছে, ‘‘পেশাদার বাহিনী হিসেবে মানবাধিকারকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয় ভারতীয় সেনারা।’’

বিবিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ শ্রীনগরের অন্তত ছ’টি গ্রামে, যেখানে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছে, মূলত সেখানেই মধ্যরাতে তরুণদের ঘর থেকে বার করে বেদম মারধর করা হচ্ছে। অজ্ঞান হয়ে গেলে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে সংজ্ঞা ফিরিয়ে ফের মারা হয়েছে। বহু তরুণ তাঁদের শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখিয়েছেন সংবাদমাধ্যমটির প্রতিনিধিকে।

Advertisement

অশান্তি: নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ কাশ্মীরিদের। শুক্রবার শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি।

এক তরুণ বিবিসি-কে জানিয়েছেন, জামাকাপড় খুলে সেই মার এত ভয়ঙ্কর, যে এর চেয়ে গুলি করে মেরে ফেললে কম কষ্ট হত। অন্তত ১৫ জন জওয়ান তাঁকে মাটিতে ফেলে বন্দুকের বাট, লাঠি এমনকি লোহার রড দিয়ে পেটায়। মারের পরে তরুণদের বলা হয়েছে, বাকিদের সে কথা বলতে, যাতে কেউ বিক্ষোভ দেখানোর সাহস না করে। আর এক তরুণ অভিযোগ করেছে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে সেনাশিবিরে ডেকে পাঠানো হয়। তার পরে পিছমোড়া করে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে মারা হয়। তাঁর ডান পায়ের হাড় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

এর মধ্যেই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে শ্রীনগরের তিনটি প্রধান হাসপাতালের ডাক্তারদের ওপর। কেউ মারা গেলে আপাতত ডেথ সার্টিফিকেট না দিতে ‘কড়া নির্দেশ’ দিয়েছে প্রশাসন। কারও কোনও অসুস্থতা বা ছররার আঘাত নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলা বা প্রেস বিবৃতি প্রকাশেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তবে চিকিৎসায় কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি বলে দাবি চিকিৎসকদের। শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর এক কর্তা বলেন, ‘‘সম্প্রতি কাঁদানে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবার পীড়াপীড়ি করার পরেও নিষেধাজ্ঞার কারণে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া যায়নি।’’ এমনকি, গত ২৫ দিনে তাঁরা কত জন জখমের চিকিৎসা করেছেন, তা-ও বলা বারণ বলে ওই কর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’ অন্য এক ডাক্তার বলেন, ‘‘আমরা সরকারি ডাক্তার। প্রশাসনের নির্দেশ মানতে বাধ্য। তা ছাড়া চিকিৎসা না-করতে কেউ তো বলছে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement