ছবি: পিটিআই।
মাথায় জখম নিয়ে শ্রীনগরের ‘শের-ই কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স’ (এসকেআইএমএস)-এ ভর্তি ছিল সৌরার আসরার আহমেদ খান (১৭)। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। তার পরেও বাঁচানো যায়নি আসরারকে। বুধবার ভোরে তার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় কবরস্থানে শেষকৃত্যও হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে কোনও ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। পুরনো কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ এলাকায় কার্ফু জারি করে পুলিশ ভ্যানে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় কবরস্তানে। পরিবারকে বলে দেওয়া হয়, সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলা যাবে না।
কিন্তু কী ভাবে জখম হয়েছিল একাদশ শ্রেণির ছাত্র আসরার? স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ৫ অগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়, আর তার পরের দিন সৌরায় বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নামেন মানুষ। শান্ত, নম্র ছেলে আসরারও ছিলেন সেখানে। কেউ পাথর ছোড়েনি, আগুন দেয়নি। শুধুই স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। নিরাপত্তা বাহিনী হঠাৎই কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। কাঁদানে গ্যাসের একটা গোলা খুব কাছ থেকে মাথায় লাগার পরে লুটিয়ে পড়ে আসরার। তবে স্থানীয়দের এই দাবি মানছে না প্রশাসন। সেনা বাহিনীর ১৫ নম্বর কোরের জিওসি-র সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মুনির খান বলেন, ‘‘৪ অগস্টের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কোথাও কোনও অসামরিক নাগরিক মারা যাননি। আমি নিশ্চিত, বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটেই জখম হয়েছিল আসরার।’’ ডাক্তাররা অবশ্য জনান্তিকে বলছেন, ‘‘কাঁদানে গ্যাসের গোলার ঘায়ে আসরারের মাথার একটা দিক থেঁতলে গিয়েছিল। তবে প্রশাসনের নির্দেশে তার পরিবারকে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি।’’
আসরারের দেহ নিয়ে যাতে বিক্ষোভ না-হয়, তার জন্য পুরনো কাশ্মীরের একটা বড় এলাকা জুড়ে এ দিন কার্ফু জারি করা হয়। এলাকায় ঢোকার সব রাস্তায় চেকপোস্ট বসানো হয়। বাইরের লোক এবং সাংবাদিকদের ওই এলাকায় ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়। তার মধ্যেও কয়েক জন শেষকৃত্যে পৌঁছে যান। আসরারের ভাই শাকির খান বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে আমরা বিপদ বাড়াতে চাই না। এখনও ওরা দেহ কেড়ে নিতে পারে। ও মারা গিয়েছে ,আত্মীয়রা অনেকেই জানে না।’’
এ দিনই সাংবাদিক বৈঠক করে সেনা বাহিনীর ১৫ নম্বর কোরের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেজিএস ধিলোঁ দাবি করেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জঙ্গিদের কাশ্মীরে ঢোকাতে সক্রিয় পাকিস্তান। সম্প্রতি দুই জঙ্গিকে সীমান্তে গ্রেফতারের পরে তারা নিজেদের লস্কর জঙ্গি এবং পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির বাসিন্দা বলে স্বীকার করেছে। তাদের জেরার দুটি ভিডিয়ো-ও দেখান ধিলোঁ। কাশ্মীরে ঢোকানোর জন্য সীমান্তের ওপারে বেশ কিছু জায়গায় জঙ্গিদের জড়ো করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জম্মু ও কাশ্মীরে কার্ফু এবং সংবাদ মাধ্যমকে কাজ না-করতে দেওয়া নিয়ে শ্রীনগরের দুই সাংবাদিক অনুরাধা ভাসিন এবং তেহসিন পুনাওয়ালা যে মামলা করেছেন, কাল সুপ্রিম কোর্টে তার শুনানি হবে। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ের আবেদনের শুনানিও কালই হচ্ছে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইযেচুরি এবং জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্রীর করা মামলাও কালই শুনবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
যেতে পারেন অমিত
নয়াদিল্লি, ৪ সেপ্টেম্বর: সপ্তাহ শেষে তাঁর অসম যাওয়ার কথা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, তার পরে এ মাসের মাঝামাঝি কাশ্মীরে যেতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অক্টোবরের ৩১ থেকে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে গণ্য হবে জম্মু ও কাশ্মীর। সে দিন সেখানে থাকার পরিকল্পনা অমিতের। নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে যাওয়ার কথা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের। কিন্তু সূত্রের খবর, তার আগেই এক বার পরিস্থিতি বুঝতে কাশ্মীরে যেতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে স্বাধীনতা দিবসের দিন তাঁর এক বার কাশ্মীর যাওয়ার তোড়জোড় হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তা হয়নি।
নিজস্ব সংবাদদাতা