বাড়ছে অসাম্য। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতে গড়পড়তা হিসাবে তফসিলি জাতি বা উপজাতিভুক্ত ব্যক্তির চেয়ে একজন তথাকথিত উচ্চবর্ণের মাসিক আয় অন্তত ৫ হাজার টাকা বেশি। এক জন মুসলিম নাগরিকের চেয়ে অ-মুসলিম নাগরিকের মাসিক আয় গড়ে ৭ হাজার টাকা বেশি। স্বনির্ভর পেশায় পুরুষের আয় মহিলাদের চেয়ে গড়ে আড়াই গুণ বেশি। এই সব ক’টি অসাম্যেরই মূলে আছে বৈষম্যমূলক মানসিকতা। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফ্যামের তৈরি ‘ভারতের বৈষম্য রিপোর্ট ২০২২’ সমীক্ষায় এই ছবি উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পরিসংখ্যান ব্যবহার করেই অক্সফ্যাম রিপোর্টটি তৈরি করেছে।
শিক্ষা এবং দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে সুযোগসুবিধার অসাম্যের সমস্যা তো আছেই। কিন্তু সে সব অতিক্রম করে যখন কমবেশি সমান দক্ষতা নিয়ে কাজ পাওয়ার প্রশ্ন আসে, সেখানেও বর্ণ, ধর্ম এবং লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য এবং পক্ষপাত যে পর্বতপ্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়, অক্সফ্যামের রিপোর্টে তা স্পষ্ট বলা হয়েছে। যেমন, রিপোর্টে দাবি, কর্মরত পুরুষ এবং কর্মরত নারীর অনুপাতে যে ব্যবধান, তার ৯৮ শতাংশই পক্ষপাতের ফল। কাজ যদি বা মিলল, বৈষম্য তখন রোজগারে। ঠিকা শ্রমিকের কাজে নারী-পুরুষের রোজগারের যে ফারাক, তার ৯৫ শতাংশই বৈষম্যপ্রসূত। পুরুষ ঠিকা শ্রমিকের গড় আয় নারী ঠিকা শ্রমিকের চেয়ে মাসে ৩ হাজার টাকা বেশি। গ্রামীণ স্বনির্ভর পেশায় পুরুষের আয় নারীর দ্বিগুণ।
বৈষম্যের এই রিপোর্ট কার্ডে ব্যবহার হয়েছে ২০০৪-৫ থেকে ২০১৯-২০র সরকারি পরিসংখ্যান। যেমন ২০১৯-২০তে শহুরে মুসলিম জনসংখ্যার ১৫.৬ শতাংশ বাঁধা মাইনের চাকরিতে রয়েছেন, অমুসলিম জনসংখ্যায় সেই অনুপাতটা ২৩.৩ শতাংশ। ২০০৪-৫-এর তুলনায় ২০১৯-২০তে কর্মসংস্থানে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য ৯ শতাংশ বেড়েছে। বেতনভুক অমুসলিমরা ৪৯ শতাংশ বেশি রোজগার করছেন মুসলিম বেতনভুকদের চেয়ে।
পরিস্থিতিটা আলাদা নয় তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্তদের জন্যও। ২০১৯-২০তে গ্রামীণ ঠিকা শ্রমিকের কাজে অন্য বর্ণের সঙ্গে তাঁদের আয়ের যে ব্যবধান তার ৭৯ শতাংশই বৈষম্যের কারণে। স্বনির্ভর পেশায় অসংরক্ষিত বর্ণের ব্যক্তিপ্রতি মাসিক আয় যদি গড়ে ১৫ হাজার ৮৭৮ টাকা হয়, তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্তের জন্য তা ১০ হাজার ৫৩৩ টাকা। বেতনভোগীদের জন্য এই ফারাকটা ২০ হাজার ৩৪৬ টাকার বিপরীতে ১৫ হাজার ৩১২টাকার। অতিমারি এই বৈষম্য যে আরও তীব্র করেছে, সেটাও দেখানো হয়েছে রিপোর্টে।