গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আবার শপথ নিচ্ছেন ভূপেন্দ্র পটেল (ছবিতে বাম দিকে)। ছবি পিটিআই।
ইঙ্গিত ছিল আগেই। শনিবার হল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। গুজরাতে বিপুল জয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ভূপেন্দ্র পটেলের নামেই সিলমোহর দিলেন বিজেপি বিধায়করা। যার অর্থ, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজয় রূপাণীর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেওয়া পটেলর উপরেই আস্থা রাখল বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব।
দলের নয়া পরিষদীয় নেতা বেছে নেওয়ার জন্য শনিবার গুজরাত বিজেপির প্রধান কার্যালয় ‘কমলম’-এ বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপির নির্বাচিত বিধায়করা। শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে পরিদর্শক হিসাবে বৈঠকে হাজির ছিলেন বিজেপির ৩ নেতা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা এবং ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে পটেলকে দলের নেতা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়।
গত শুক্রবারই রীতি মেনে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে এসেছিলেন পটেল। তখনই অনেকে ধারণা করেছিলেন যে, দলের বিধায়কদের নিয়ে নতুন করে সরকার গঠনের জন্য রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানাবেন তিনি। গুজরাতের মসনদে বিজেপি ফিরলে পটেলই যে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন, সে ইঙ্গিত ভোটের আগেই দিয়ে রেখেছিল পদ্মশিবির। প্রধানমন্ত্রী মোদী ভোটপ্রচারে গিয়ে ‘নরেন্দ্র-ভূপেন্দ্র ডবল ইঞ্জিন সরকার’-এর পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। গুজরাত বিজেপির সভাপতি সিআর পাতিল আগেই জানিয়েছিলেন পটেলকেই আবার মুখ্যমন্ত্রী করা হবে।
২০১৪ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে মোদী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত আনন্দীবেন পটেল। পরে তাঁকে সরিয়ে রূপাণীকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে রূপাণীকে সরিয়েই নিয়ে আসা হয় ভূপেন্দ্র পটেলকে। কোনও রাজ্যে নির্বাচনে যাওয়ার আগে সচরাচর বিজেপির তরফে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম প্রকাশ্যে আনা হয় না। প্রধানমন্ত্রী মোদীই যে দল এবং সরকারের একমাত্র মুখ, প্রচারে সেটাই তুলে ধরা হয়।
পটেলকে আরও এক বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নেওয়ার একাধিক কারণ আছে বলে মনে করছেন ভোটপণ্ডিতদের একাংশ। পটেল গুজরাতের পাটিদার জনগোষ্ঠীর মানুষ। পাটিদাররা গুজরাতের প্রায় ৬০টি বিধানসভা আসনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করেন। সংরক্ষণের দাবিতে উত্তাল আন্দোলনে এই পাটিদাররাই ২০১৭ সালে বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়েছিল। যার সুফল পেয়েছিল কংগ্রেস। বিজেপির আসন সংখ্যা সে বার ৩ অঙ্কও ছুঁতে পারেনি। তার পরই পাটিদারদের মন জয়ে তৎপর হয়ে ওঠে পদ্মশিবির। প্রতিষ্ঠানবিরোধী ক্ষোভ প্রশমিত করতে রূপাণীকে সরিয়ে আনা হয় পাটিদার পটেলকে। পটেলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং বিনয়ী ব্যবহারও তাঁর পক্ষে গিয়েছে বলে মনে করছেন দলের কেউ কেউ।
ষাট বছর বয়সি পটেল নিজেও এ বার বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। ঘাটলোদিয়া কেন্দ্র থেকে তিনি ১ কোটি ৯২ লক্ষ ভোটে জয়ী হয়েছেন। এত বিপুল ব্যবধানে আর কোনও প্রার্থী এ বার সে রাজ্যে জয়ী হননি। আগামী সোমবার গান্ধীনগরের হেলিপ্যাড ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন পটেল। শপথগ্রহণে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা।