প্রতীকী ছবি।
দেশে টিকা উৎপাদনে ঘাটতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজ়রি গ্রুপ অন ইমিউনাজ়েশনের প্রধান এন কে অরোড়া গত মঙ্গলবার বলেছিলেন, কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের প্রথম কয়েকটি ব্যাচ গুণমানের দিক থেকে ছাড়পত্র না-পাওয়ায় ওই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সরাসরি তাঁর বক্তব্য খণ্ডন না-করলেও আজ বিবৃতি দিয়ে কোভ্যাক্সিন নির্মাতা সংস্থা ভারত বায়োটেক জানাল, টিকার মান ও সুরক্ষার দিক থেকে বিন্দুমাত্র আপস না-করাটাই তাদের নীতি।
ভারত বায়োটেকের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত বাজারে আসা তাদের যাবতীয় টিকা হায়দরাবাদের জিনোম ভ্যালির উৎপাদনকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে। কর্নাটকের মালুর এবং গুজরাতের অঙ্কালেশ্বরে তৈরি হওয়া টিকা সেপ্টেম্বরের পর থেকে পাওয়া যাবে। হায়দরাবাদে তৈরি প্রতিষেধক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সবুজ সঙ্কেতের পরেই ছাড়পত্র পেয়েছে। বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘‘কোভ্যাক্সিনের প্রতিটি ব্যাচকে দু’শোরও বেশি গুণমান নির্ধারক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ভারত সরকারের সেন্ট্রাল ড্রাগস ল্যাবরেটরি (সিডিএল) ছাড়পত্র দিলে তবেই ওই সমস্ত ব্যাচের টিকা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হয়।’’ তবে ভারত বায়োটেকের যুক্তি, কোভ্যাক্সিন তৈরি করতে গিয়ে তাদের জীবন্ত ভাইরাস নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। স্তরে স্তরে সাবধানতা ও শুদ্ধতা বজায় রাখতে হচ্ছে। তার ফলে সংখ্যায় কম হলেও চূড়ান্ত শুদ্ধ ও সুরক্ষিত একটি প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ‘ভুয়ো খবর, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা’ আমজনতার মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বলে তাদের অভিযোগ।
টিকাকরণের মন্থর গতি নিয়ে গত কাল আরও এক বার দিল্লি হাই কোর্টের সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্র। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কের টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মোদী সরকার। দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি এবং বিচারপতি জসমিত সিংহের বেঞ্চ বলেছে, টিকাকরণের এখন যা গতি, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে এই লক্ষ্য পূরণ হওয়া কার্যত অসম্ভব। দিল্লির করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম বলছে, লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে দৈনিক ৯০ লক্ষ মানুষকে টিকা দিতে হবে। পরিকাঠামো নেই, টিকা নেই। তাই এটা অসম্ভব। আমাদের এই সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।’’
এ দিকে, এন কে অরোড়া এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ৪৫ ও তার বেশি বয়সিদের জন্য কোভিশিল্ড টিকার দু’টি ডোজ়ের ব্যবধান কমিয়ে আনা হতে পারে। বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে আগামী দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্র। বর্তমানে কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান রাখা হচ্ছে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ। অরোড়া বলেছেন, ‘‘টিকার কার্যকারিতা এবং দুই ডোজ়ের ব্যবধানের প্রভাব বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন বয়সের জনগোষ্ঠীর মধ্যে কী ভাবে পড়ছে, সে বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি।’’