উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার বিজেপি সরকার যে ভাবে বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নামা আন্দোলনকারীদের দমনের চেষ্টা করেছে, তার নিন্দা করেছে কৃষক সংগঠনগুলি। ছবি: পিটিআই।
কিছু জায়গায় ট্রেন বাতিল করতে হল। কিছু রাজ্যে বন্ধ থাকল দোকানবাজার। অবরোধ করা হল জাতীয় সড়ক, রাস্তা। যদিও নরেন্দ্র মোদী সরকারের তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা ভারত বন্ধে মোটের উপর স্বাভাবিকই রইল জনজীবন। কিন্তু মাত্র চার ঘন্টার ‘চাক্কা জ্যাম’ ঠেকাতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যে পুলিশি তৎপরতা দেখা গেল, তা অভূতপূর্ব।
বিরোধীদের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাতের মতো রাজ্যে বিজেপি সরকার মঙ্গলবারের ভারত বন্ধ শুরুর আগেই কংগ্রেস, বিরোধী দল ও কৃষক নেতা ও সমাজকর্মীদের ‘গৃহবন্দি’ করে ফেলে। উত্তরপ্রদেশে বিভিন্ন শহরে বিরোধী দলগুলি প্রতিবাদ মিছিল, সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু সোমবার রাত থেকেই স্থানীয় নেতাদের বাড়ির বাইরে পুলিশ পৌঁছে যায়। উত্তরপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বলেন, ‘‘পুরো উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস নেতাকর্মীদের নজরবন্দি ও গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ লখনউয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সুভাষিণী আলির বাড়ির বাইরেও পুলিশি পাহারা বসানো হয়।
কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, অসম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, তেলঙ্গানা, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়ে বন্ধের ভাল রকম প্রভাব পড়েছে। মহারাষ্ট্রে জোট সরকারের তিনটি শাসক দল, শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস বন্ধে সমর্থন জানানোয় পুণে, নাসিক, নাগপুরের মতো জায়গায় পাইকারি বাজার বন্ধ ছিল। রাজ্যের বহু মাণ্ডিও বন্ধ ছিল। কেন্দ্রে মোদী সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চললেও ওড়িশার বিজু জনতা দল এ দিনের বন্ধকে সমর্থন জানিয়েছিল। সর্বভারতীয় কৃষক সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটির হিসেবে, ২৫টি রাজ্যের প্রায় ২০ হাজার জায়গায় বন্ধ পালিত হয়েছে। ৫০ লক্ষ মানুষ বন্েধ অংশ নিয়েছেন।
কৃষক সংগঠনের নেতারা আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা কোনও জোরাজুরি করবেন না। শান্তিপূর্ণ ভাবেই বন্ধ পালিত হবে। তার পরেও বহু মানুষ বন্ধের সমর্থনে এগিয়ে আসায় আজ কৃষক নেতারা আমজনতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার বিজেপি সরকার যে ভাবে বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নামা আন্দোলনকারীদের দমনের চেষ্টা করেছে, তার নিন্দা করেছে কৃষক সংগঠনগুলি।
কৃষক নেতাদের অভিযোগ, মঙ্গলবারের বন্ধকে গুজরাতের সমস্ত কৃষক সংগঠন সমর্থন করেছিল। মঙ্গলবার ভোররাতে কৃষক ও শ্রমিক নেতাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। গোটা গুজরাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। গুজরাতে অরুণ মেহতা, অশোক সোমপুরা, দয়াভাই যাদবের মতো বাম নেতাকে বিভিন্ন শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গুজরাত বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের পরেশ ধানানি স্কুটারে চেপে বনধের সমর্থনে ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ রাখার অনুরোধ করতে বেরিয়েছিলেন। পুলিশের জিপ তাঁকে ধাওয়া করে আটক করে। উত্তরপ্রদেশে কিসান সভার সভাপতি ভারত সিংহকে আগরা থেকে আটক করা হয়। গুরুগ্রাম থেকে রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ কে কে রাগেশ, কিসান সভার নেতা পি কৃষ্ণপ্রসাদ, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী মরিয়ম ধওয়ালে-সহ একাধিক নেতাকে আটক করা হয়। রাজস্থানের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অমরা রামকেও আটক করা হয়।