রেল অবরোধে বন্ধ সমর্থনকারীরা। ছবি: সংগৃহীত।
৩টি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ভারত বন্ধে শামিল হয়ে দেশের ৩২টি জায়গা অবরোধ করল কৃষক এবং ক্ষেতমজুর সংগঠনগুলি। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বন্ধ শুরু হওয়ার পর দিল্লি, পঞ্জাব এবং হরিয়ানার বিভিন্ন রাস্তা, জাতীয় সড়ক এবং ট্রেন অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এই বন্ধের প্রভাব পড়েছে অন্ধপ্রদেশেও। পাশাপাশি, আন্দোলনের জেরে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৪টি শতাব্দী এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে।
কৃষক আন্দোলনের ৪ মাস পূর্তির দিনে ভারত বন্ ধের ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিসান মোর্চা (এসকেএম)। এই সংগঠনের ছাতায় তলায় একত্র হয়ে দেশের প্রায় ৪২টি কৃষক এবং ক্ষেতমজুর সংগঠন গত ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লির সিংঘু, টিকরি এবং গাজিপুর সীমানায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ৬ ডিসেম্বরের পর শুক্রবার ফের বন্ধ পালন করছে তারা। এসকেএম নেতৃত্ব আগেই জানিয়েছিলেন, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে বন্ধ চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। বিতর্কিত কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহারের পাশাপাশি ফসলে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আইনি প্রতিশ্রুতিও দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। কৃষক সংগঠনগুলির পাশাপাশি শুক্রবারের ভারত বন্ধে সমর্থন জানিয়েছে অকালি দল, কংগ্রেস এবং বামেরা।
শুক্রবার বন্ধের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকেই দিল্লি-গাজিপুর সীমানায় রাস্তায় অবরোধে বসেন কৃষকেরা। পঞ্জাবের অম্বালা, জিটি রোডেও একই ছবি দেখা যায়। ওই রাজ্যের একাধিক জায়গায় ধর্মঘটে শামিল হন কৃষক নেতা থেকে শুরু করে মহিলারা। শাহপুরের রেল লাইনেও বসে পড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। ওয়াগায় ইন্দো-পাক সীমান্তেও জড়ো হন অসংখ্য আন্দোলনকারী। ওই জায়গায় জাতীয় সড়কের উপরেই বন্ধের সমর্থনে পথসভা করেন কৃষক নেতারা। পঞ্জাবের বারনালা জেলায় বনধে শামিল হয়ে ট্রেন অবরোধ করেন মহিলারা। মানসা জেলায় ধর্নায় বসেন অসংখ্য় মহিলা। কিসান মজদুর সংঘর্ষ কমিটির সদস্যরা ‘রেল রোকো’ কর্মসূচি পালন করেন। অমৃতসরে দিল্লি-অমৃতসর রেল লাইনে বসে পড়েন তাঁরা। মোহালিতে বিমানবন্দরে যাওয়ার রাস্তাতেও প্রতিবাদ করেছেন কৃষকেরা। শুক্রবারের এই বন্ধে সমর্থন যুগিয়েছেন পঞ্জাব বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাও। রাজ্যের ৯ নম্বর জাতীয় সড়কে চাক্কা জ্যামের কর্মসূচি পালন করেছেন অকালি দলের কর্মী-সমর্থকেরা।
পঞ্জাবের মতো রাজ্য ছাড়া বন্ধের প্রভাব পড়েছে হরিয়ানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও। হরিয়ানায় শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন হাইওয়ে যাওয়ার রাস্তায় অবরোধ শুরু হয়। বন্ধ চলাকালীন অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের রাস্তা প্রায় ফাঁকাই ছিল। রাজ্যের সিপিআই নেতৃত্ব আগেই বন্ধে সমর্থন জানিয়ে দাবি করেছিল, বিজেপি ছাড়া সমস্ত রাজনৈতিক দলই এই ধর্মঘটের পক্ষে রয়েছে। শুক্রবার বিজয়ওয়াড়ার বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন রাজ্যসচিব পি মধু এবং রাজ্য সিপিআইয়ের সচিব রামকৃষ্ণ।
শুক্রবার দিল্লির গাজিপুর এলাকায় ২৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্র্যাফিক চলাচল বাতিল করেছে দিল্লি পুলিশ। ওই এলাকায় ২৪ ঘণ্টাই গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, বন্ধ চলাকালীন কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে মোটের ওপর এখনও পর্যন্ত বন্ধ শান্তিপূর্ণই রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।