ছবি সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, রাম এত দিন তাঁবুতে ছিলেন। এ বার তিনি ভক্তদের তৈরি সুবিশাল মন্দিরে থাকবেন। সেই মন্দিরের ভূমিপুজো এবং শিলান্যাস ঘিরে আজ উদ্বেল হল সরযূ নদীর তীরবর্তী শহর অযোধ্যা।
গত কয়েক দিন ধরে ফুলে, আলপনায়, আলোকমালায়, হোর্ডিং-পোস্টারে নিজেকে প্রস্তুত করছিল সরয়ূর তীরের এই শহরটি। ভূমিপুজো ও শিলান্যাস স্থলের আশপাশ সাজানো হয়েছিল মূলত গাঁদা ফুল এবং হলুদ ও গৈরিক পতাকায়। অনেক বাড়ির ছাদে এবং বারান্দায় ছিল গৈরিক পতাকা। তার কোনওটাতে রামের ছবি, আবার কোনওটাতে হনুমানের। সকাল থেকেই বিভিন্ন পাড়ায় মাইকে বেজেছে ভজন, সংস্কৃত শ্লোক। মাঝে মধ্যে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। কিন্তু গোটা শহর এক সঙ্গে মুখর হল যখন ঘোষণা হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভূমিপুজোস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির সঙ্গে একযোগে চলল ঘণ্টা ও শঙ্খধ্বনি।
ভূমিপুজো শুরু হতেই শহর চোখ রাখল টিভির পর্দায় বা জায়েন্ট স্ক্রিনে। শ্রীঘর হাট এলাকায় গয়নার দোকানগুলির সামনে উপচে পড়া ভিড়— টেলিভিশনে তখন ভূমিপুজোর সরাসরি সম্প্রচার। পথচলতি মানুষ, কিছু নিরাপত্তারক্ষী এবং সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও শামিল সেই ভিড়ে। ওই ভিড়ের ভিতর থেকে এক জন তো বলেই ফেললেন, ‘‘টিভিতে যখন রামায়ণ দেখানো হত, তখন এই রকম রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকত। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে টিভি দেখতেন অনেকে।’’
দোকানের সামনে বসে টিভি দেখতে দেখতে ষাটোর্ধ্ব শান্তি বলছিলেন, ‘‘ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইলাম। এখন মনে হচ্ছে সত্যিই রামমন্দির তৈরি হবে।’’ শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। যে গুলি খোলা ছিল সেখানেও বিকিকিনি হয়েছে নামমাত্রই। গয়না ব্যবসায়ী শিবদয়াল সোনি তো রীতিমতো উচ্ছসিত। বললেন, ‘‘দোকানে আজ কোনও ক্রেতা আসেননি। ভিড় জমেছে টিভি দেখতে। এঁরাও আমার মতো ভক্ত।’’ ভূমিপুজো শেষ হতেই শহরের বেশ কিছু জায়গায় লাড্ডু বিলি শুরু হয়। উৎসবে মিষ্টিমুখ। দোকানগুলির টিভির সামনে ভিড় কিন্তু তখনও অটুট। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার জন্য অধীর অপেক্ষা। বক্তৃতার শুরুতে যখন মোদী ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিলেন তখন হাত তুলে গলা মেলালেন পথচারীরাও।
তবে নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক ছিল না। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিশেষ অতিথি ছাড়া শিলান্যাসস্থলে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অযোধ্যার সীমা আগেই সিল করে দিয়েছিল পুলিশ। অযোধ্যামুখী রাস্তাগুলিতে ১০০টি চেকপোস্ট তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য ৩০০ জন অল্পবয়সি পুলিশকর্মীকে নিয়োগ করেছিল সরকার। তার আগে ওই পুলিশকর্মীদের করোনা পরীক্ষা করা হয়। ভূমিপুজোস্থলটি যে হেতু ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, তাই ওই পুজোর জায়গার আশপাশের বাড়িতে কমান্ডো এবং শার্প শ্যুটার মোতায়েন করা হয়। পুজোস্থলে রাস্তার কুকুর ইত্যাদি যাতে ঢুকে না পড়ে, সে জন্য ৫০০ জন পুরকর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছিল। গোটা অযোধ্যা আজ ছিল নো-ফ্লাইং জোন।