বেঙ্গালুরু থেকে ৪১৯ কিলোমিটার দূরে ভদ্রপুর গ্রাম। এই গ্রামেই ‘জন্ম’ আমেরিকা, কোরিয়া, জাপানের! এই গ্রামেই জন্ম নিয়েছিল হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, গুগল, ফেসবুকও! বিশ্বাস না হলে নিজের চোখে যাচাই করে নিতে পারেন।
এক সময়ে কর্নাটকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিল হাক্কি পিক্কি জনজাতির বাস। যাযাবর এই জনজাতির বর্তমানে দেখা মেলে কর্নাটকের ভদ্রপুর গ্রামে। মূলত জঙ্গলেই থাকতেন তাঁরা। জংলি ফল, পাখি, ছোট জীবজন্তু শিকার করে জীবন চালাতেন।
কিন্তু ১৯৭০ সালে কর্নাটক সরকার পাখি শিকার নিষিদ্ধ করে দেয়। পাখি শিকার আটকাতে তাঁদের জঙ্গল থেকে সরিয়ে দেয় প্রশাসন। তাঁদের জন্য আলাদা বসতি স্থাপন করা হয় প্রশাসন থেকেই। এর পর থেকেই ভদ্রপুর গ্রামে তাঁদের বাস।
আশেপাশে মানুষদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে থাকতে ক্রমে তাঁদের মধ্যে আধুনিক চিন্তাধারা গড়ে উঠেছে। হাক্কি পিক্কিদের অনেকেই এখন গ্রামের সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। কেউ কেউ চাকরি করতে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলেও গিয়েছেন। তবে এখনও বেশির ভাগের মন পড়ে রয়েছে সেই জঙ্গলেই। সেই জীবনটাই এখনও তাঁদের কাছে সুন্দর।
এই হাক্কি পিক্কি জনজাতিদের মধ্যেই নামকরণের অদ্ভুত রীতি প্রচলিত। সন্তান জন্মের পর তার মুখ দেখে প্রথমেই যা মনে আসবে বাবার, সন্তানের নাম সেটাই হবে। নামকরণের অদ্ভুত এই রীতি যুগ যুগ ধরে রয়েছে হাক্কি পিক্কিদের মধ্যে।
শিকারই ছিল জীবন ধারণের মূল অবলম্বন। তাই আগে বিভিন্ন শিকারিদের নামেই নাম রাখা হত সন্তানদের। নাম দেওয়া হত প্রাণী, গাছ, ফুল-ফল দিয়ে। এখনও প্রতিটা পরিবারে নামকরণের সেই রীতিই চলে আসছে।
তবে এখন যেহেতু তাঁরা শহুরে মানুষদের সংস্পর্শে এসেছেন, বাইরের দুনিয়া নিয়ে অনেক বেশি খোঁজ খবর রাখেন, তাই নামকরণের ধরনও কিছুটা পাল্টেছে। যেমন এখন প্রাণী, ফুল, ফলের বদলে সেলব্রিটিদের নাম, খাবারের নাম এমনকি রাজনীতিকদের নামও রাখা হচ্ছে।
গুগল, হাইকোর্ট, ডলার, সুগার, কফি, মিলিটারি, সুপ্রিম কোর্ট, কংগ্রেস, ঘাস এমনকি আমেরিকা, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের মতো দেশের নামেও সন্তানদের নামকরণ হয়েছে এই গ্রামে। অমিতাভ, সলমনের মতো সেলিব্রিটির ‘জন্ম’ যেমন এই গ্রামে হয়েছে, রয়েছে প্রচুর বিদেশি সেলিব্রিটিও। তবে কয়েক বছর আগে আমেরিকা, জাপানের মৃত্যু হয়েছে। ছবিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে তিনি গভর্নমেন্ট।
জঙ্গলের জীবনে নামকরণ নিয়ে কারও কিছু বলার ছিল না। প্রশাসন এ নিয়ে মাথাও ঘামাত না। কিন্তু আশেপাশের মানুষদের সঙ্গে মিশে বসবাস শুরু করার পর থেকেই অনেক নাম নিয়ে আইনি বাধার মুখোমুখি পড়তে হয়েছে তাঁদের। মামলাো হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।
সম্প্রতি আদালত এই ধরনের নামকরণে ছাড়পত্র দিয়েছে। ফলে এই নামের ভোটার কার্ড, লাইসেন্স এবং পাসপোর্টও তৈরি হয়ে গিয়েছে হাক্কি পিক্কিদের।