Electoral Bond Scam

‘নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তোলা আদায়’! কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলার বিরুদ্ধে এফআইআরের নির্দেশ

বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতের ওই নির্দেশের পরেই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য নির্মলার ইস্তফা দাবি করেছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫৮
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তোলাবাজির অভিযোগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিল আদালত। কর্নাটকের ‘জনাধিকার সংঘর্ষ সংগঠন’-এর তরফে আদর্শ আইয়ার নামে এক ব্যক্তি বেঙ্গালুরুর একটি আদালতে নির্মলার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে শনিবার এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

আদালতের ওই নির্দেশের পরেই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য নির্মলার ইস্তফা দাবি করেছেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করেছিল শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে বন্ড কেনাবেচা সংক্রান্ত সব তথ্য প্রকাশ করতে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ও নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। ওই রায়ে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘কুইড প্রো কুয়ো’ বলে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ, কোনও কিছুর বিনিময়ে কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হিসাবে দেখানো হয়েছিল বিষয়টিকে।

আবেদনকারীর দাবি, সেই ‘সুবিধা’ আসলে ‘তোলাবাজি’। তাই নির্মলা-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে বিশেষ জনপ্রতিনিধি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। আদালত দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৭(এ) ধারায় এফআইআর রুজু করে তিন মাসের মধ্যে নির্মলা ও অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। এর আগে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে জানিয়েছিল, নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুবিধা পাওয়ার জন্য বন্ডের মাধ্যমে শাসকদলকে টাকা দিয়েছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত গত ২ অগস্ট জানিয়েছিল, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দেওয়া এবং নেওয়ার সময় তা ‘কুইড প্রো কুয়ো’ বা ‘ক্ষতিকারক’ ছিল কি না, তা নিয়ে এখন তদন্ত হতে পারে না।

Advertisement

নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে যে তিন ধরনের আর্থিক লেনদেনের ‘খোঁজ মিলেছে’ তা আদতে তোলাবাজি বলে অভিযোগ উঠেছে। এই তিন ধরনের আর্থিক লেনদেনের মধ্যে প্রথম, কাজের বরাত, লাইসেন্স, কাজের অনুমতি পাওয়ার জন্য অনুদান। দ্বিতীয়, ইডি, আয়কর দফতর বা সিবিআইয়ের অভিযানের ঠিক আগে বন্ডে অনুদান দিয়েছে অনেক সংস্থা। অনেক ক্ষেত্রে অনুদানের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণের কাজ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃতীয়, সংস্থার পক্ষে অনুকূল নীতি তৈরির জন্য বন্ডে অনুদান। বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দিয়ে বেআইনি ভাবে সুবিধা নেওয়ায় অভিযুক্ত হিসাবে বেশ কিছু সংস্থার নামও উঠে এসেছিল সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে।

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি ‘অসাংবিধানিক’ বললেও নির্বাচনী বন্ডের পক্ষে সওয়াল করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, ভোটে কালো টাকা ব্যবহার বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই ওই ব্যবস্থা (নির্বাচনী বন্ড) চালু করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যদি সৎ প্রতিফলন দেখা যায়, সকলেই এক দিন এ নিয়ে অনুশোচনা করবে।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি কখনওই বলিনি একটি সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত। কিন্তু বিরোধী দলগুলি নির্বাচনী বন্ড নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে।’’ অন্য দিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লোকসভা ভোটের আগে বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচনী বন্ড আদৌ কোনও স্বচ্ছতার কর্মসূচি নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে বড় তোলাবাজির চক্র। আর নরেন্দ্র মোদী তার মাস্টারমাইন্ড (মূলচক্রী)।’’ নির্মলার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের জন্য আদালতের নির্দেশে বিরোধীদের অভিযোগ কার্যত মান্যতা পেল বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement