উত্তরকাশীর ধসে পড়া সেই সুড়ঙ্গ। ছবি: এক্স।
২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর। দিনটা বোধহয় কোনও দিনই ভুলতে পারবেন না ওই ৪১ জন। খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলার মধ্যেই আচমকা ধসে পড়েছিল নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গ। হুড়মু়ড়িয়ে নেমে এসেছিল পাথর-বালি-সিমেন্টের চাঁই। আটকা পড়েছিলেন সকলেই। টানা ১৭ দিন ভেঙে পড়া সেই সুড়ঙ্গে আটকে থাকার পর উদ্ধার করা হয়েছিল শ্রমিকদের। সেই দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ২ মাস। ভয়াবহ স্মৃতিকে সঙ্গী করেই উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারায় ফের শুরু হল সুড়ঙ্গের কাজ। সেই কাজে হাত লাগিয়েছেন সে দিন আটকে পড়া সেই ৪১ জনের মধ্যে একজন।
১২ নভেম্বর উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ-ধসে আটকে পড়েছিলেন বাংলার মানিক তালুকদার। রুদ্ধশ্বাস অভিযানের শেষে ২৮ নভেম্বর মুক্তির আলো দেখেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার থেকে সেই সুড়ঙ্গে শুরু হওয়া কাজে যোগ দিয়েছেন তিনিও। মানিকের কথায়, ‘‘ওটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ছিল। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমাদের ভয়ে কাজ করা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’
আবার যদি একই রকমের দুর্ঘটনা ঘটে? এই কাজে যে ঝুঁকি রয়েছে, সে কথা জানেন মানিক। সে দিন আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের বেশিরভাগই ছিলেন তাঁর মতেই পরিযায়ী শ্রমিক। দূর-দূরান্ত থেকে সিল্কিয়ারায় সুড়ঙ্গ খুঁড়তে এসেছিলেন তাঁরা। মানিকের কথায়, তিনি একা নন, তাঁরা সকলেই এই কাজের সম্ভাব্য বিপদের কথা জানতেন। তাই দু’সপ্তাহেরও বেশি একটানা অন্ধকারে আটকে থাকার পরেও মনোবল হারাননি কেউই।
১২ তারিখ সকালে উত্তরকাশীতে সুড়ঙ্গ ধসে পড়ার পর তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়েছিল। সুড়ঙ্গের ধসে পড়া অংশের মধ্যে দিয়েই আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল একটি পাইপ। তার মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছিল খাবার, জল, অক্সিজেন। তার পর পাথরের চাঙড় সরানো শুরু হয়। শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর জন্য একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও সবগুলিই ব্যর্থ হয়। এমনকি ড্রিলিং মেশিন ভেঙে যায়। উদ্ধার অভিযানে বারবার বাধার পরে শেষমেশ বিতর্কিত এবং নিষিদ্ধ ‘ইঁদুর-গর্ত’ খোঁড়ার পদ্ধতি ব্যবহার করে মেলে সাফল্য।
কাজ বন্ধ রাখলে তো চলবে না। তাই পরিবহণ মন্ত্রক গত সপ্তাহে সিল্কিয়ারার সুড়ঙ্গের ফের কাজ শুরু করার ছাড়পত্র দেওয়ার পরেই আবার সেখানে ফিরেছেন মানিক। বাকি ৪০ জন না ফিরলেও তাঁদের জায়গা নিয়েছেন অন্য পরিযায়ী শ্রমিকরা। আসলে পেটের টান বড় বালাই। মৃত্যুভয়ও সেখানে তুচ্ছ হয়ে যায়।