নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশের জেরে উত্তপ্ত শিলং। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।
পাহাড়ে বন্ধের মুখোমুখি। ভাবলেন, তাহলে জঙ্গলটা ঘুরে যাই। কিন্তু গন্ডার দেখতে এসেও যে এ ভাবে ফেঁসে যাবেন, বাতিল করতে হবে বিমানের টিকিট, তা ভাবতে পারেননি খড়দহের শম্ভুনাথ দাস, নীপবীথি দাসরা।
শিলং ঘোরার ইচ্ছে অনেক দিনের। ৮-৯ ডিসেম্বর শিলংয়ে ভালই ঘুরলেন। কিন্তু নাগরিকত্ব বিল লোকসভায় পাশ হওয়ার প্রতিবাদে ১০ ডিসেম্বর শিলং বন্ধ। ৯ জনের দল ভাবল, তার চেয়ে কাজিরাঙায় চলে যাওয়া ভাল। ১১ ডিসেম্বর সাফারি করলেন। গন্ডার, অন্য বন্যপ্রাণী দেখেছেন প্রাণভরে। ঠিক ছিল পরের দিন গুয়াহাটি ফিরবেন। কিন্তু তার মধ্যেই বিল পাশ হল রাজ্যসভায়। উত্তাল হয়ে উঠল অসম। জারি হল কার্ফু। বন্ধ হল ইন্টারনেটও। শম্ভুবাবু জানান, জঙ্গল ঘোরা মাথায় উঠেছে। কোনও খবরও পাচ্ছি না। কলকাতায় ফোন করে জানতে হচ্ছে অসমের পরিস্থিতি। গত কাল তাঁদের ফেরার বিমান টিকিট ছিল। ফেরার গাড়িই পেলেন না। বাধ্য হয়ে কলকাতায় ফোন করে টিকিট বাতিলের ব্যবস্থা করতে হয়। লোকসান হয় অনেক টাকা। আজ ফের বিমানের টিকিট কাটেন চড়া দামে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত গাড়ি না পেয়ে পাগলের মতো অবস্থা। গুয়াহাটিতে কার্ফু শিথিলের খবরে ১৮ হাজার টাকা খরচ করে বিমান ছাড়ার ঘণ্টাখানেক আগে তাঁরা গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পৌঁছে হাঁফ ছাড়েন। তাঁর কথায়, অনেক শিক্ষা হল। কাজিরাঙায় নিজের জিপসি সাফারি ও ‘হোম স্টে’ রয়েছে বাঙালি কৃষ্ণ নাথের। তিনি জানান, ভরা মরশুমের এই কাণ্ডে পরপর বুকিং বাতিল হচ্ছে।
বিল পাশের জেরে শিলংয়ের পুলিশ বাজারেও বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর চলে। পোড়ানো হয় গাড়ি। ফলে সেখানেও বন্ধ ইন্টারনেট, জারি কার্ফু। কলকাতা থেকে আসা অভিজিৎ দে হোটেলে আটকে পড়েন। গত কাল অনেক চেষ্টা করেও গুয়াহাটি পৌঁছতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত আজ অন্ধকার থাকতেই পাড়ি দেন শিলং থেকে। বেঙ্গালুরু থেকে বেড়াতে আসা সুতপা মুখোপাধ্যায়ের ফেরার ট্রেন ছিল গতকাল। স্বামী ও ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে অসহায় সুতপাদেবীরা পুলিশবাজারে হন্যে হয়ে ঘুরেও ফেরার গাড়ি জোগাড় করতে পারেননি। আজ কোনও মতে তাঁরা গুয়াহাটি এসেছেন। কিন্তু ফেরার টিকিট জোগাড় হয়নি।
আরও পড়ুন: অশান্তির জের, লাফিয়ে বাড়ছে বাতিল ট্রেনের সংখ্যা
শিলং হোক বা কাজিরাঙা, সর্বত্র পর্যটকদের সমস্যা আরও বাড়িয়েছে এটিএম বন্ধ থাকা। শম্ভুনাথবাবু জানান, হোটেলে বেশি দিন থাকতে হল। হাতে টাকা নেই। কলকাতা থেকে আত্মীয়দের অনুরোধ করে বিমানের টিকিট, হোটেল মালিককে ব্যাঙ্কে টাকা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করেছি। অনেক ক্ষেত্রে পর্যটকরা গাড়ির জন্য চড়া দাম দিতে রাজি থাকলেও নগদ টাকার অভাবে গাড়ি পাচ্ছেন না। গুয়াহাটির বাঙালি গাড়ি চালক স্বপন দেব বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এমন যে নিজের গাড়ি অক্ষত রাখার চিন্তায় বড় ঝুঁকিও নিতে পারছি না।’’
আজ গুয়াহাটির অবস্থা তুলনায় উন্নত হলেও কলকাতা-হাওড়ায় রেল অবরোধ শুরু হওয়ায় আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন আটকে পড়া পর্যটকরা। কসবার বাসিন্দা চিন্ময় ভট্টাচার্য আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে এসেছিলেন অসমের শৈল শহর হাফলঙে। কিন্তু সড়কপথ বন্ধ, ট্রেনও চলছে না। আজ কোনও মতে তাঁরা গুয়াহাটি আসেন। ঠিক করেছেন এখান থেকে জেনারেল টিকিট কেটে যে ট্রেনে ঠাঁই পাবেন উঠে পড়বেন।