National News

বাংলা বললেই আর কাজ জুটবে না বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে!

ফলে, প্রশ্ন উঠেছে, কর্নাটকের বিজেপি সরকারও কি অঘোষিত ভাবে অসমের মতো জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা ‘এনআরসি’-র নামে ‘বাঙালি খেদাও’ শুরু করে দিল?

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:৪১
Share:

গ্রাফিক:তিয়াসা দাস।

বাংলায় কথা বললেই আর কাজ পাওয়া যাচ্ছে না বেঙ্গালুরুর ঝাঁ চকচকে এলাকার বহুতল কমপ্লেক্সগুলির অ্যাপার্টমেন্টে। এতটাই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে যে, বেশির ভাগ কমপ্লেক্সের চত্বরে বাংলাভাষি রাত-দিনের কাজের লোক, রান্নার লোক, গাড়ির চালকদের আসা-যাওয়া কোনও সরকারি ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সোমবার থেকে। ওই কমপ্লেক্সগুলির নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে দিনে বারকয়েক খবরাখবর নিয়ে যাচ্ছেন বেঙ্গালুরুর পুলিশকর্মীরা। চলছে যখনতখন পুলিশের টহলদারিও। অথচ সরকারি ভাবে প্রকাশ্যে কিছুই বলা হচ্ছে না। ওই সব বাংলাভাষি কর্মীদের বেশির ভাগই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা বা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রুজি-রোজগারের জন্য গিয়ে থাকেন বেঙ্গালুরুতে।

Advertisement

ফলে, প্রশ্ন উঠেছে, কর্নাটকের বিজেপি সরকারও কি অঘোষিত ভাবে অসমের মতো জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা ‘এনআরসি’-র নামে ‘বিদেশি বিতাড়ন’ শুরু করে দিল?

বৈধ কাগজপত্র নেই, এই অভিযোগে বেঙ্গালুরুতে গত ২৬ অক্টোবর ৬০ জন বাংলাদেশিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার পর থেকেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে একটি দৈনিক ‘ডেকান হেরাল্ড’ জানিয়েছে।

Advertisement

দৈনিকটি জানিয়েছে, বেঙ্গালুরুর কাদুবিসানাহাল্লি, করমঙ্গলা, এইচএসআর লেআউট, সোমসুন্দর পাল্যা, পানাথুর, সারজাপুর রোড, কুন্দলাহাল্লি ও টুবারাহাল্লি লিমিট্‌সের মতো ঝাঁ চকচকে এলাকাগুলির প্রায় সবক’টি বহুতল কমপ্লেক্সেই অঘোষিত ভাবে বাংলাভাষি কর্মী মজুর, কাজের লোকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে সোমবার থেকে। ওই সব বহুতল কমপ্লেক্সের অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বাসিন্দাদের ই-মেল চালাচালির উপর নজর রেখে দৈনিকটি জানতে পেরেছে, আগামী দু’তিন দিনের মধ্যেই এই এই নিয়ম পুরোদমে চালু হয়ে যাবে বহুতলগুলিতে।

কাদুবিসানাহাল্লির একটি বহুতল কমপ্লেক্সের বাসিন্দা অনঘ কুলকার্নি বলেছেন, ‘‘এখনও আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে কিছু শুনিনি। তবে যদি সেটা হয়, তা হলে যাঁরা কয়েকটা টাকাপয়সার জন্য আমাদের অ্যাপার্টমেন্টগুলিতে কাজ করতে আসেন, তাঁরা তো খুবই বিপদে পড়বেন। এ ব্যাপারে সরকারকে স্পষ্ট ভাবে জানাতে হবে, তারা কী চাইছে? না হলে তো খুব সমস্যার সৃষ্টি হবে।’’

আরও পড়ুন- মার খাচ্ছি, কেউ দেখার নেই! পুলিশকর্মীদের বেনজির বিক্ষোভ দিল্লিতে ​

আরও পড়ুন- জানলার কাচে ফাটল নিয়েই আকাশে উড়ল বিমান, সমালোচনার মুখে ক্ষমা চাইল স্পাইসজেট​

বেঙ্গালুরুর ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের দেওয়া পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, শহরে এই মুহূর্তে এই ধরনের বাংলাভাষির সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ হাজার। তাঁরা ওই সব কমপ্লেক্সের অ্যাপার্টমেন্টগুলিতে হয় রান্নার কাজ করেন বা থাকেন পরিচারিকা হিসাবে। অথবা থাকেন শিশু বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখভাল করতে।

কুন্দলাহাল্লির একটি বহুতল কমপ্লেক্সের বাসিন্দা অপূর্ব দাস বলেছেন, ‘‘পুলিশ আমাদের এখানকার কমপ্লেক্সগুলির নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে দিনকয়েক আগে বেশ কয়েক বার কথা বলেছে। আর তার পর থেকেই এই পরিস্থিতি।’’

পানাথুরের একটি বিলাসবহুল কমপ্লেক্সের বাসিন্দা মায়া খন্না জানিয়েছেন, তাঁদের পাশের একটি কমপ্লেক্সে বাংলাদেশি কাজের লোক রাখা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

বাড়ির কাজের লোকদের অধিকার আদায়ের জন্য যিনি লড়াই করেন সেই ‘স্ত্রী জাগৃতি সমিতি’-র গীতা মেনন কিন্তু কোনও সরকারি ঘোষণা ছাড়া এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেউ বাংলা ভাষায় কথা বললেই আর তিনি যদি মুসলিম হন, তা হলেই তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন কেন? আর সেই অভিযোগে তাঁকে কাজ খোয়াতে হবে কেন? তা হলে তো বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাগুলিতে যে বাংলাভাষি মুসলিমরা কাজ করছেন, তাঁদেরও তাড়িয়ে দিতে হয়!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement