Plastic Free Country

লক্ষ্য প্লাস্টিক-মুক্ত দেশ, দিশা বাঙালি বিজ্ঞানীদের

গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বিজ্ঞানী প্রীতিরঞ্জন মণ্ডল, শুভাশিস মাইতি, অধ্যাপক সূর্যসারথী বসু ও অধ্যাপক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩ ০৫:৪৩
Share:

(বাঁ দিক থেকে) কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, সূর্যসারথী বসু, ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী, প্রীতিরঞ্চন মণ্ডল এবং শুভাশিস মাইতি। —নিজস্ব চিত্র।

তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ থেকে এশিয়া। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে সাবধান করা হয়েছে, উত্তর গোলার্ধের তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তবু বহু ক্ষেত্রে সরকার এখনও উদাসীন। যার অন্যতম উদাহরণ, দেদার প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থের ব্যবহার। সমস্যার সমাধানে প্লাস্টিকের বিকল্পের সন্ধান শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা, যা পরিবেশের ক্ষতি করে না, কিন্তু গুণাগুণ প্রায় একই। সম্প্রতি এমনই একটি বায়োপলিমার আবিষ্কার করেছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, বেঙ্গালুরু (আইআইএসসি) ও পাঁচ বাঙালি বিজ্ঞানী। গবেষকদের দাবি, তাঁদের তৈরি ‘পলিইউরোথিন’ জীবাণুবিয়োজ্য, টেকসই, সহজলভ্য ও একেবারেই ব্যয়সাপেক্ষ নয়। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ— পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তো নয়ই, বরং ‘উপকারী’।

Advertisement

এই গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বিজ্ঞানী প্রীতিরঞ্জন মণ্ডল, শুভাশিস মাইতি, অধ্যাপক সূর্যসারথী বসু ও অধ্যাপক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। ‘পলিইউরোথিন’-এর জন্য পেটেন্টের আবেদন জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানী দলটি। সদ্য ভারত সরকারের কাছ থেকে পেটেন্টের শংসাপত্র পেয়েছেন তাঁরা। ইন্দ্রনীল জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই পরিবেশবান্ধব বায়োপলিমারটি কিনেও নিয়েছে একটি স্টার্ট আপ।

রেস্তরাঁ থেকে বাড়িতে আনানো খাবারের পাত্র হোক কিংবা ক্যারিব্যাগ, কাঁটা চামচ কিংবা দাঁত মাজার ব্রাশ, প্লাস্টিকের ব্যবহার সর্বত্র। আর দূষণও ঠিক ততটাই। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন প্লাস্টিক তৈরি করা হয়, যার মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার (রিসাইকল) করা হয়। প্লাস্টিক জীবাণুবিয়োজ্য নয়। এটি সহজে মাটিতে মেশে না, ৫০০ থেকে ১০০০ বছরও লেগে যেতে পারে। তাতেও এর ‘বিষক্রিয়া’ শেষ হয় না। প্লাস্টিক যদি পোড়ানো হয়, সে ক্ষেত্রে এটি বাতাসে ডায়োক্সিনস, ফিউরানস, মার্কারি, পলিক্লোরিনেটেড বাইফেনিল জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে। প্লাস্টিকের ব্যবহার রাসায়নিক দূষণ তৈরি করে, সমুদ্র ও স্থলভাগের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করে, তা ছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরির ভয় তো রয়েইছে, যা ক্যানসার পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।

Advertisement

ইন্দ্রনীল জানিয়েছেন, তাঁরা পলিইউরোথিন তৈরি করেছেন রেড়ির তেল, ডাইআইসোসায়ানেট ও ধানের গোড়া দিয়ে। রেড়ির তেল ভোজ্যতেল নয়, কিন্তু ভারতে এর উৎপাদন প্রচুর। ফলে দাম কম। বহু নিষেধ সত্ত্বেও চাষের কাজের পরে ধানের গোড়া পুড়িয়ে ফেলা হয়। যা ভয়াবহ দূষণ সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানী দলটি জানিয়েছে, ধানের গোড়ার ব্যবহার এক দিকে দূষণ রুখবে, অন্য দিকে তা পরিবেশের উপকারে ব্যবহার করা হবে। রেড়ির তেল, ধানের গোড়ার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ডাইআইসোসায়ানেট নামক একটি রাসায়নিক। গবেষণাগারে রাউন্ড বটল ফ্লাস্কে এই তিনটির বিক্রিয়া করা হয়েছিল। বিক্রিয়ায় তৈরি পদার্থটিকে রাতভর রেখে দেওয়া হয়েছিল টেফলন প্লেটে। সবশেষে তৈরি হয় পলিইউরোথিন। বিজ্ঞানীদের দাবি, এর উপযোগিতা প্লাস্টিকের মতোই। কিন্তু এটি জীবাণুবিয়োজ্য। ইন্দ্রনীলরা পরীক্ষামূলক ভাবে পলিইউরোথিনকে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিলেন। দেখা গিয়েছে, তিন-চার মাস পরে এর ৩৫ শতাংশ জীবাণুবিয়োজিত (ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পচন) হয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের আরও দাবি, তাঁরা এ-ও নিশ্চিত করেছেন, পদার্থটি সম্পূর্ণ জীবাণুবিয়োজ্য, ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে না।

পলিইউরোথিনের সাহায্যে চামচ, ব্যাগ, গ্লাস, এমন বেশ কিছু প্রতি দিনের ব্যবহৃত জিনিস তৈরি করেছেন ইন্দ্রনীলরা। তাঁদের আশা, এই প্রচেষ্টা পরিবেশ দূষণে অনেকটাই রাশ টানতে পারবে। প্লাস্টিকমুক্ত হওয়ার দিকে এগোবে দেশ, তথা বিশ্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement