ফের ঘর হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন কোডারমার চারাডিহির উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দারা। কারণ, তাঁদের এলাকার উপর দিয়ে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের ফরমান দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
দেশভাগের সময় ও পার বাংলার খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহি থেকে ভারতে এসেছিলেন বাঙালি অধ্যুষিত ওই কলোনির মানুষের পূর্বসূরিরা। অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে সেখানে থাকলেও, এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে বসবাসের স্বীকৃতি মেলেনি। প্রশাসনের নির্দেশে তাই ফের উদ্বাস্তু হওয়ার শঙ্কা ছড়িয়েছে ওই মহল্লায়।
বাংলাদেশে ঘর হারিয়ে সীমান্তের এ পারে এসে অন্য রাজ্যের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের রাঁচি, জামশেদপুর, হাজারিবাগ, কোডারমাতে বসতি গড়েছিলেন অনেকে। রাঁচির কাঁটাটোলিতে বসবাসকারী উদ্বাস্তুদের জমির পাট্টা দিয়েছিল তৎকালীন বিহার সরকার। কিন্তু জামশেদপুরের ‘ইস্ট বেঙ্গল কলোনি’ বা কোডারমার চারাডিহির উদ্বাস্তুরা তা পাননি। প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও লাভ হয়নি।
দু’মাস আগে জারি সরকারি বিজ্ঞপ্তি সকলের রাতের ঘুম কেড়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, রাঁচি-পটনা সংযোগকারী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের জন্য সরতে হবে কোডারমার ওই কলোনির বেশিরভাগ বাসিন্দাকে। জমির মালিকানার নথি নেই তাঁদের কারও হাতে। ঘরবাড়ি হারালেও তাই ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনের দাবি তোলার মতো সুযোগ নেই কারও। চারাডিহির উদ্বাস্তু কলোনির লোকজন বলছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও এই সমস্যার দিকে নজর দিচ্ছেন না।
কোডারমার ডেপুটি কমিশনার কে রবি জানান, জমির মালিকানার প্রমাণ দিতে না পারলে উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। প্রশাসন তাঁদের কাছে ওই জমিতে বসবাসের প্রমাণ চেয়ে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, “এই জট সহজে খুলবে না। সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা চলছে। রাজ্য সরকারই এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।” ডেপুটি কমিশনারের নির্দেশে পুজোর আগে স্থানীয় অঞ্চল আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেন কলোনির বাসিন্দারা। কিন্তু সুরাহা হয়নি।
বেগতিক দেখে কলোনির অনেকে ইতিমধ্যেই অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন। কিন্তু শ’দেড়েক বাসিন্দার ভরসা উদ্বাস্তু কলোনির একচিলতে জমিটুকুই। তাঁদের কেউ কয়লাখনির পুরনো মজদুর, কারও রয়েছে ছোটখাট দরজির দোকান। কেউ কর্মহীন। কলোনির বাসিন্দা মনোরঞ্জন দাস বলেন, “কয়েক দিন আগে আমার ছেলে মারা গিয়েছে। চিকিৎসা করানোর খরচও জোগাড় করতে পারিনি। মাথার উপরের ছাদটা এ বার চলে গেলে রাস্তায় বসা ছাড়া উপায় থাকবে না।”
জমির মালিকানার দাবিতে আশির দশকের শেষের দিকে অনশনে বসেছিলেন চারাডিহির বাসিন্দারা। লাভ হয়নি। রবিশঙ্কর বলবন্ত নামে এক বাসিন্দা বলেন, “নেতারা শুধু ভোটের সময় আসেন। আমাদের সমস্যার কথা শোনেন। তার পর ফিরে তাকান না।”