ছবি: পিটিআই।
ত্রিপুরায় জনজাতি ভিত্তিক দলগুলি রাজ্যে ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) চালু করার দাবি তুলছে। রাজ্য সরকারের শরিক আইপিএফটি অনড় জনজাতিদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবিতে। তাদের এই দুই দাবি খণ্ডনে সরব হল, অখিল ভারতীয় বৈশ্য কাপালি সমাজ। তাদের বক্তব্য, একশো বছরের বেশি সময় ধরে ত্রিপুরায় মিশ্র জাতি ও জনজাতির বসবাস। জনজাতিদের ওই দাবিগুলি রাজ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করবে।
বিযয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় অখিল ভারতীয় বৈশ্য কাপালি সমাজ। সংগঠনটির সদস্যরা তফসিলি জাতিভুক্ত। এর সম্পাদক অসীম সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেটিতে তিনি লিখেছেন, বর্তমান বাংলাদেশের চাকলা রোশনাবাদ এলাকা ত্রিপুরার মানিক্যরাজের জমিদারির অংশ ছিল।
মানিক্যরাজের রাজস্বের দুই-তৃতীয়াংশই আসত চাকলা রোশনাবাদের প্রজাদের কাছ থেকে। মানিক্যরাজের অধীন ত্রিপুরায় বহু কাল ধরেই মোট জনসংখ্যার ৪৭-৪৮ শতাংশ ছিল অ-জনজাতির, অর্থাৎ হিন্দু ও মুসলিম বাঙালি। ১৯১১ সালের জনগণনায় জনজাতির সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১১ হাজার ৩০৮। তখন অ-জনজাতির জনসংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৩০৯। তার দশ বছর আগে, ১৯০১ এর জনগণনায় জনজাতির সংখ্যা ছিল অ-জনজাতিদের চেয়ে ১০ হাজার বেশি। ১৯৪৯-এ ত্রিপুরা ভারতে যোগ দেওয়ার পরে ও পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মীয় পীড়নের ফলে চাকলা রোশনাবাদ ছেড়ে অ-জনজাতি তথা বাঙালিরা পার্বত্য ত্রিপুরায় এসেছিলেন। যাকে ত্রিপুরা মহারাজদের জমিদারির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। ব্রিটিশরা ইনার লাইন পারমিটকে ব্যবহার করত রাজনৈতিক স্বার্থে। আপাত যুক্তি ছিল, বহিরাগত মানুষের হাত থেকে পার্বত্য অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু আইএলপি-র ওই যুক্তি ত্রিপুরার ক্ষেত্রে খাটে না। একশো বছরের বেশি সময় ধরেই ত্রিপুরায় মিশ্র জাতির বসবাস। যে কারণে ত্রিপুরার বিচক্ষণ রাজারা জেনেবুঝেই আইএলপি-তে অসম্মতি জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: সিএএ এর জের, ভোপালে বিজেপি ছাড়লেন ৪৮ সংখ্যালঘু সমর্থক
ত্রিপুরায় ভৌগোলিক এলাকা ও জাতিগত জন-বিন্যাস এর বাস্তব চিত্রটা হল, ৬৯% মানুষ অ-জনজাতির। তাঁরা বসবাস করেন ৩১% এলাকার মধ্যে। আর ৩১% মানুষ, মূলত জনজাতির, বসবাস করেন ৬৯% এলাকায়। রাজ্যের প্রায় ৬৮ শতাংশ এলাকা নিয়ে তৈরি এডিসি এলাকার ২০ ভাগ মানুষই অ-জনজাতির। এডিসির শহর এলাকায় তাঁরা জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ। ফলে, আইএলপি করা হলে, গোটা রাজ্যে বাণিজ্য, পণ্য পরিবহন ও পর্যটন দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অখিল ভারতীয় বৈশ্য কাপালি সমাজ।
ওই চিঠিতে ত্রিপুরার মহারাজাদের বাঙালি ও বাংলা প্রীতি ও সম্প্রীতির ঐতিহাসিক দৃষ্ঠান্তও তুলে ধরা হয়েছে। ত্রিপুরার রাজাদের জমিদার চাকলা রোশনাবাদ ওই সময়ের বাংলার নবাবদের ছিল বটে, কিন্তু, তখন বাংলার সুবে নবাবদের সরকারি ভাষা ফার্সি হলেও ত্রিপুরার সরকারি কাজকর্ম চলত বাংলায়। ককবরক দ্বিতীয় সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে সবে ১৯৭৯ সালে। বাম সরকারের আমলে। তেমনই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সখ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সংগঠনটি মনে করিয়ে দিয়েছে যে, রবীন্দ্রনাথ নোবেল পাওয়ার আগে ত্রিপুরার রাজ পরিবারই প্রথম তাঁকে সাহিত্যকর্মের জন্য “ভারত ভাস্কর” উপাধি দিয়ে সম্মান জানিয়েছিল।
ত্রিপুরায়, জনজাতিদের জমির অধিকারকে সুরক্ষিত করতে ত্রিপুরার রাজারা ১৯৪০ সালে ট্রাইবাল রিজার্ভ এলাকা নির্ধারণ করে দেন। পরে, তা আরও সুরক্ষিত হয় সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল অনুসারে ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে। জনজাতিদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে এডিসি-র হাতে আরও অধিকার ও ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছে
কাপালি সমাজ।