শহিদ: নায়েব সুবেদার পরমজিৎ সিংহের দেহের সামনে ছেলে সাহিলদীপ। মঙ্গলবার অমৃতসরে। ছবি: পিটিআই।
সীমান্ত পেরিয়ে দুই ভারতীয় সেনা-জওয়ানকে মেরে তাঁদের মুণ্ডচ্ছেদের ঘটনায় এ বার নাম জড়াল লস্কর-ই-তইবার।
গত কাল সকালে জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে কৃষ্ণা ঘাটি সেক্টরে মৃত্যু হয় দুই ভারতীয় সেনা-জওয়ানের। ভারতীয় সেনা কাল প্রথমে জানিয়েছিল, গোটা অভিযানটির পিছনে ছিল পাক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ‘বর্ডার অ্যাকশন টিম’ (ব্যাট)-এর সদস্যরা। কিন্তু আজ উধমপুরে ভারতীয় সেনার নর্দার্ন কম্যান্ডের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্ত লস্করের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাট পিছনে থেকে মদত দিলেও ভারতের মাটিতে ঢুকে কাল ওই হামলা চালিয়েছে লস্কর জঙ্গিরা। সেই সময় একই সঙ্গে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে ভারতের দু’টি ‘ফরওয়ার্ড ডিফেন্স লোকেশন’ লক্ষ করে হামলা চালাচ্ছিল পাক সেনা। মর্টার আর রকেট হামলার মোকাবিলায় বাকি জওয়ানরা যাতে ব্যস্ত থাকেন, সেটাই উদ্দেশ্য ছিল পাক বাহিনীর।’’ ভারতের অভিযোগ অবশ্য পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। সরকারি বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘‘পাকিস্তানি সেনা চরম পেশাদার। অন্য কোনও দেশের সেনাকে তাঁরা কোনও দিন অসম্মান করেন না, এমনকী ভারতীয়দেরও।’’ আজ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজও। তাঁর কথায়, ‘‘কাশ্মীর সমস্যায় পাকিস্তানকে জোর করে টেনে আনে ভারত। ভারত যে ভাবে নিরস্ত্র কাশ্মীরিদের উপর নির্যাতন করছে, তার জবাব তাকে রাষ্ট্রপুঞ্জে দিতে হবে।’’ কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ এর্দোগানের প্রস্তাবকে স্বাগতও জানান তিনি।
কাল প্রথমে নিহত দুই সেনা-জওয়ানের দেহ ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আজ সেনার তরফে জানানো হয়েছে, ওই দু’জনের মুণ্ডচ্ছেদ করে পালিয়েছে জঙ্গিরা। নিহত দু’জনের নাম প্রেম সাগর এবং নায়েব সুবেদার পরমজিৎ সিংহ। হেড কনস্টেবল প্রেম সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ২০০তম ব্যাটেলিয়নের সদস্য ছিলেন। পরমজিৎ ২২ শিখ রেজিমেন্টের। গোটা বিষয়টি নিয়ে কালই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি। ইসলামাবাদকে এর দাম চোকাতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, রীতিমতো ফাঁদ পেতে কাল ওই অভিযান চালিয়েছে জঙ্গিরা। সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে তারা ভারতে ঢোকে। ওই এলাকায় যোগাযোগ স্থাপনকারী একটি লাইন নষ্ট করে দেয় তারা। তারা জানত, লাইন সারাতে সেখানে ভারতীয় বাহিনী আসবে। ঠিক সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় জঙ্গিরা।
কালই কাশ্মীর উপত্যকায় পৌঁছেছেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত। বাহিনীকে আরও সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কাল রটেছিল, হামলার প্রতিশোধ নিতে রাতেই পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে সাত পাক সেনাকে মেরেছে ভারতীয় বাহিনী। কিন্তু আজ এক সেনা কর্তা বলেন, ‘‘এত দ্রুত পদক্ষেপ আমরা করিনি। যা করার ভেবেচিন্তেই করব।’’