শীত পড়েছে। অসম তথা উত্তর-পূর্বে রমরমিয়ে শুরু হয়ে যাওয়ার কথা পর্যটনের মরশুম। অন্য বছর এই সময়ে কাজিরাঙায় ঘর পাওয়াই মুশকিল হত। কোহিমার হর্নবিল উৎসবে ভিড়ে ঢাকে স্টল। মণিপুরের সাঙ্গাই উৎসবে লক্ষাধিকের সমাগম হয়। কিন্তু এ’বছর এখনও খালি পড়ে হোটেল, রিসর্টের ঘর। চাইলেই বুকিং মিলছে জিপ সাফারির! হর্নবিলের হোম-স্টে গুলিও খালি। জিপ চালক থেকে হোটেল মালিক, সকলেই দুষছেন নোট বাতিলকে।
মাইনে জমা পড়ার তিন দিন পরেও রাজ্যের এটিএমগুলিতে টাকা বাড়ন্ত। দু’হাজারের নোট মিললেও ৫০০ বা ১০০-এর নোট মিলছেই না। এই অবস্থায় কাজিরাঙায় অনেক পর্যটক সফর বাতিল করেছেন। যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অবস্থাও শোচনীয়।
কাজিরাঙা হোটেল ও রিসর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফটিক বরা জানান, নোট বাতিলের ফলে এ বছর কাজিরাঙায় দেশি ও বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা গত বারের তুলনায় ৪০-৪৫ শতাংশ কম। যাঁরা এসেছেন তাঁরাও হোটেলের বিল মেটাতে নাজেহাল। প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী সব লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে করার কথা বললেও, এখনও সিংহভাগ হোটেল-রেস্তোঁরাতেই কার্ড নেওয়ার মেশিন নেই। নেই খুচরোও। অনেকে বাধ্য হয়ে নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে বিল মেটাচ্ছেন। পর্যটকদের সমস্যা কাটাতে হোটেলে চেকও নেওয়া হচ্ছে।
কাজিরাঙা জিপ সাফারি ইউনিয়নের তরফে নিপন শইকিয়া জানান, জিপ বুকিং কাউন্টারে সব পর্যটক ২০০০ টাকার নোট নিয়ে আসছেন। তাই খুচরো করা যাচ্ছে না। বাতিল হচ্ছে বুকিং। একই দশা হাতি সাফারির ক্ষেত্রেও। পর্যটকের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কম। অসম পর্যটন বিকাশ নিগমের হিসেবে অতিথিশালার বুকিং এ বার গত বারের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কম। অনেক ক্ষেত্রে অতিথিশালা নিরুপায় পর্যটকদের কাছ থেকে পুরনো নোটও নিয়েছে। কাজিরাঙা ওয়াইল্ডলাইফ সোসাইটি বা পেলিক্যান ধাবাতেও একই দশা। খুচরোর সমস্যায় অনেকে না খেয়েই ফিরে যাচ্ছেন।
নাগাল্যান্ডে শুরু হওয়া হর্নবিল উৎসব উত্তর-পূর্বের অন্যতম সবচেয়ে বড় বার্ষিক উৎসব হয়ে উঠেছে। অন্য বার পর্যটক, সঙ্গীতপ্রেমী, চিত্রগ্রাহকরা কোহিমার হোটেলগুলি বা অনুষ্ঠানস্থল কিসামা গ্রামের হোম-স্টে গুলিতে থাকার জায়গা পান না। কিন্তু এ বার এখনও জায়গা খালি! এমনকী যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে ‘হাউসফুল’ থাকে, সেখানেও প্রথম দিন ১৫০ জন বিদেশি ও মাত্র ২০০ দেশীয় পর্যটকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। উৎসব কর্তৃপক্ষের হিসেবে, গত তিন দিনে আড়াইশো বিদেশি, ১০০০ দেশি ও ৭৫২১ জন স্থানীয় মানুষ হর্নবিলে এসেছেন। পর্যটন দফতর সূত্রে খবর, অনেক পর্যটক বিমান টিকিট, হোটেল বুকিং বাতিল করেছেন। এক দিকে পর্যটকদের হাতে টাকা নেই, অন্য দিকে এটিএম থেকে টাকা তোলার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাই বেড়ানোর অবস্থাতেই নেই সাধারণ মানুষ। একই রকম হতাশা নিয়ে শেষ হয়েছে মণিপুরের সাঙ্গাই উৎসবও। পর্যটক বা স্থানীয় মানুষ মেলায় এলেও কেনাকাটা হয়েছে গত বারের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম।