বাতিল নোট জমা আর নতুন নোট দেওয়া নিয়েই গত দেড় মাস জেরবার ব্যাঙ্ক। ব্যতিব্যস্ত নগদের চাহিদা আর গ্রাহকদের ক্ষোভ সামাল দিতে। ফলে কার্যত শিকেয় উঠেছে বাকি সব কাজ। আর তার মাসুল গুনেই এ রাজ্যে এ বার রবিচাষের জন্য কৃষিঋণ প্রায় দিতেই পারেনি তারা।
রাজ্যভিত্তিক ব্যাঙ্কগুলির কমিটি (স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটি বা এসএলবিসি) সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে এ পর্যন্ত দেওয়া কৃষিঋণের অঙ্ক আগের বারের থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। গত বছর মোটামুটি যে অঙ্ক ধার দেওয়া হয়েছিল আলুর মতো রবিশস্য চাষে।
এসএলবিসি-র এক সদস্য জানান, ২০১৫ সালে ১ এপ্রিল থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলি কৃষিঋণ দিয়েছিল মোট ২৩ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু এ বার ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার কোটি। বছরের শেষ ক’দিনে আর তা খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনাও কম। তাঁর মতে, এই সাত হাজার কোটির ঘাটতি এ বার রবিশস্যকে ধার জোগাতে না পারার কারণেই।
সাধারণত রবিশস্যের জন্য ঋণ নেওয়ার সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। এসএলবিসি-র আশা ছিল, আগের বারের তুলনায় এ বার রাজ্যে রবিশস্যের জন্য ঋণের চাহিদা হবে প্রায় হাজার কোটি বেশি। ধার দিতে হবে ৮ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। কিন্তু সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছে ৮ নভেম্বর নোট নাকচের ঘোষণা। বণ্টিত ঋণের পরিমাণ বাড়া তো দূর অস্ত্, আগের বারের ধারটুকুই দিয়ে ওঠা যায়নি।
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের রাজ্য কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘নোটের ঝামেলা কবে শেষ হবে, তা জানা নেই। এর জেরে শুধু কৃষিঋণ নয়, মার খাচ্ছে ব্যাঙ্কের সমস্ত ধরনের ঋণই।’’ কর্মীরা বলছেন, ‘‘নোট জমা করতে আর দিতেই তো দিন কাবার। বাকি কাজের সময় কোথায়?’’ ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘এমনিতেই ঋণ খেলাপের ধাক্কা সামলাতে অধিকাংশ ব্যাঙ্ক জেরবার। তার উপর এখন যদি ঋণ দিয়ে আয়ের সুযোগও হাতছাড়া হয়, তবে মুনাফার ক্ষেত্রে সমস্যা ঘোরালো হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’
তথৈবচ অবস্থা কৃষিবিমারও। চাষিরা ধার না পাওয়ায় কতটা জমিতে রবি চাষ করবেন, তা ঠিক করতে পারেননি এখনও। ফলে বিমার কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি রাজ্যের পক্ষে। অথচ সাধারণত এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয় ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, ‘‘নোট কান্ডের জেরে রবিশস্যের চাষিরা এ বার প্রয়োজন মতো ঋণ পাননি। ফলে এখনও পর্যন্ত ঠিকই হয়নি যে, কতটা জমিতে চাষ হবে। আর সেটা ঠিক হলে তবে না বিমার প্রশ্ন।’’