Kashmir

জীবনদায়ী প্রয়াসেও কাঁটা নিষেধের বেড়া

জম্মু-কাশ্মীরের হাসপাতালগুলির মধ্যে ইন্টারনেটে যোগাযোগের সেতু গড়ে ‘সেভ হার্ট ইনিশিয়েটিভ’ যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৮ সালে।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

গোটা কাশ্মীরে ইন্টারনেট ফিরেছে— সরকারি ভাবে প্রচার করা হচ্ছে এটাই। ফিরেছে আসলে ইন্টারনেটের টু-জি পরিষেবা। থ্রি-জি, ফোর-জি-র যুগে, বেশির ভাগ কাজের ক্ষেত্রেই যা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। তার উপরে সোশ্যাল মিডিয়া ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো বার্তা পাঠানোর অ্যাপগুলির উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েই গিয়েছে। আর এতেই ধাক্কা খেয়েছে জীবন বাঁচানোর এক শুভ উদ্যোগ।

Advertisement

জম্মু-কাশ্মীরের হাসপাতালগুলির মধ্যে ইন্টারনেটে যোগাযোগের সেতু গড়ে ‘সেভ হার্ট ইনিশিয়েটিভ’ যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৮ সালে। গত বছর মে মাস পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৫৭২ জনের চিকিৎসার বন্দোবস্ত হয়েছে এই উদ্যোগের মাধ্যমে। হাসপাতালগুলির পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে হয়েছে ‘থ্রম্বোলিসিস’ও। এতে বাঁচানো গিয়েছে কয়েকশো জীবন। কিন্তু এর পর থেকেই সন্ত্রাস রোধ ও রাজনৈতিক কারণে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ফলে থমকে যায় এদের কাজকর্ম। গত মাসে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন প্রথম দফায় ইন্টারনেট ফেরায় ৬০টি সরকারি দফতর ও হাসপাতালে। এর পরে ২৫ জানুয়ারি কাশ্মীরের সব জেলায় চালু করা হয় টু-জি নেট। নেট দুনিয়ার সামাজিক মাধ্যম ও বার্তাবাহী অ্যাপগুলি নাগালের বাইরে রেখে দেওয়ায় ‘সেভ হার্ট ইনিশিয়েটিভ’-এর কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে।

প্রতি বছর উপত্যকায় হৃদ্‌রোগে মারা যান বহু মানুষ। দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলি থেকে সবচেয়ে কাছের কোনও চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় অনেক জীবন। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই সমস্যা সুরাহার পথ গড়ে তুলেছেন চিকিৎসকেরা। কার্ডিয়োলজিস্ট তথা এসকেআইএমএস-এর সহকারী অধ্যাপক ইমরান হাফিজ় এই উদ্যোগের অন্যতম হোতা। হেল্থ সার্ভিসেসের প্রাক্তন ডিজি সালিম-উর-রেহমানেরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এই ক্ষেত্রে। দু’জনেরই খেদ, ‘‘গত ৪ অগস্টের পর থেকে আমরা একটি কেস নিয়েও আলোচনা করতে পারিনি। হোয়াটসঅ্যাপেও বার্তা-বিনিময় করতে পারিনি কারও চিকিৎসার বিষয়ে।’’

Advertisement

হৃদ‌্‌রোগ সংক্রান্ত জরুরি চিকিৎসা দিতে ‘সেভ হার্ট ইনিশিয়েটিভ’-এর চিকিৎসকেরা চারটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের ধাক্কায়, গত ৪ অগস্টের পর থেকে চারটির একটি গ্রুপের মাধ্যমেও যোগাযোগ রাখতে
পারেননি চিকিৎসকেরা। তাঁদের অনেকেরই ক্ষোভ, উপত্যকায় গুজব, সন্ত্রাস বা হিংসায় প্ররোচনা রোখা উদ্দেশ্য হলে, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলিতে পর্যবেক্ষক হিসেবে কয়েক জনকে যোগ করে নিলেও হয়তো এমন অচলাবস্থা তৈরি হত না। যোগাযোগের পথটাই রুদ্ধ করে দিয়ে প্রাণরক্ষার এই আয়োজন ভেস্তে দেওয়ার যৌক্তিকতা কী?

‘সেভ হার্ট ইনিশিয়েটিভ’-কে রোগীদের কথা জানানোর রাস্তা ছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। ইমরান হাফিজ় বলছেন, ‘‘এর ফলে গ্রামাঞ্চল থেকে কোনও রোগীকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও আমরা যোগাযোগ রাখতে পারতাম। কিন্তু কোথায় কার জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন, তা জানার রাস্তাটাই বন্ধ রয়ে রয়েছে। অত্যন্ত জরুরি জীবনদায়ী এমন একটা ব্যবস্থা ফের চালু করতে দেওয়ার ব্যপারে সরকারি কর্তাদের কোনও হেলদোল নেই এখনও।’’

প্রশাসনের তরফে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি শফকত খান অবশ্য আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘‘চিকিৎসকদের এই উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। চেষ্টা চলছে যাতে সব হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া যায়। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement