শহর করিমগঞ্জ

আইন আছে, দফতরও আছে, কিন্তু অর্থ এবং রাজনীতির কাছে অসহায়

আইন বন্দি আইনের বইয়ে। টাকা আর রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত করছেন সবাই। আর জলে টইটম্বুর শহর। শহর সুন্দর হবে কী করে? সোজা কথায় করিমগঞ্জ শহরের অবস্থা অনেকটা এরকমই। বিত্তবানরা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে সুন্দর সুন্দর বাড়ি তৈরি করছেন। কিন্তু বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জেরে জলে ডুবছে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল মানুষের বসতি। অথচ শহর যাতে পরিকল্পনা মাফিক গড়ে ওঠে তার জন্য সরকার দু’টি বিভাগকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। কিন্তু আইনকে বলবত্ করে কার সাধ্য!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৪
Share:

আইন বন্দি আইনের বইয়ে। টাকা আর রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত করছেন সবাই। আর জলে টইটম্বুর শহর। শহর সুন্দর হবে কী করে?

Advertisement

সোজা কথায় করিমগঞ্জ শহরের অবস্থা অনেকটা এরকমই। বিত্তবানরা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে সুন্দর সুন্দর বাড়ি তৈরি করছেন। কিন্তু বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জেরে জলে ডুবছে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল মানুষের বসতি। অথচ শহর যাতে পরিকল্পনা মাফিক গড়ে ওঠে তার জন্য সরকার দু’টি বিভাগকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। কিন্তু আইনকে বলবত্ করে কার সাধ্য!

এক পশলা বৃষ্টিতেই করিমগঞ্জ শহরের লঙ্গাই রোড, লক্ষ্মীচরণ রোড, চর বাজার, সুভাষ নগর, বিপিন পাল রোডের অনেক বাড়িই ডুবে যায়। মঙ্গলবারের বৃষ্টি শহরে প্রায় নজির সৃষ্টি করেছে। করিমগঞ্জের লঙ্গাই রোডে থাকা অনুকুল ঠাকুরের আশ্রমের অনেক অংশই জলের তলায়। গত সত্তর বছরে এলাকার এমন চেহারা কেউ দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না। এক দিকে যেমন জলাশয়গুলি ভরাট করে তৈরি হচ্ছে সুউচ্চ অট্টালিকা। ফলে আগে শহরের জল যে ভাবে জলাশয়গুলি ধারণ করত তা আর পারছে না। অন্য দিকে, শহরের নাকাশী নালাগুলির জলধারণ ও জল টানার ক্ষমতাও তুলনায় কমছে।

Advertisement

শহর যাতে সুন্দর থাকে তার জন্য সরকার আইন প্রণয়ন করেছে। টাউন এন্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং বিভাগ ছাড়াও পুরসভাকে এ সব বিষয়ে নজর রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইনে। অর্থাত্ কাউকে যদি একটি বাড়ি তৈরি করতে হয় তবে দু’টি বিভাগ থেকেই ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। দু’টি বিভাগের ছাড়পত্র ছাড়া কেউই বাড়ি তৈরি করতে পারবে না। বাড়িটি কী ভাবে হবে, কতটা জায়গা ছাড়তে হবে, বাড়ির উচ্চতা কতটা হবে ইত্যাদি সব কিছুরই বিশদ বিবরণ থাকতে হবে বাড়ির নকশায়। আইন অনুযায়ী এই নকশা বা বাড়ির প্ল্যান জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দু’টি বিভাগে। বাণিজ্যিক ভবন তৈরির জন্য প্রতি বর্গমিটারে জমা দিতে হবে ৫০ টাকা করে। আর বসতবাড়ির ক্ষেত্রে জমা করতে হবে বর্গমিটারে ১৫ টাকা করে।

সেই টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে। প্ল্যানে অনুমোদনও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী বাড়িটি তৈরি হচ্ছে কিনা তা নিয়ে টি অ্যান্ড সি পি বা পুরসভা কারও হেলদোল নেই। একটি বারের জন্য কোনও লোক পাঠিয়ে দেখা হয় না প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা। ফলে যে যার খুশিমতো মাটি ভরাট করে প্রাসাদ বানিয়ে যাচ্ছেন। তৈরি করছেন উঁচু ভিত। আর খেসারত দিচ্ছেন পাশের বাড়ির বা পাশের বসতির মানুষজন। এ বিষয়ে করিমগঞ্জের উপ-পুরপ্রধান পার্থসারথি দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিকল্পনা-বহির্ভূত বাড়ি ভেঙে ফেলার কোনও নজির কিংবা এ ধরনের কাজে কোনও বাড়ির মালিককে কারণ-দর্শানোর নোটিশ ধরানোর কোনও উদাহরণ দিতে পারেননি। অনুরূপ ভাবে করিমগঞ্জের টাউন এন্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর, যাঁকে শহরের ‘প্ল্যানার’ হিসেবে সরকার আখ্যা দিয়ে রেখেছেন, তিনিও এরকম নজির দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আইন যে আইনের বইয়েই আপাতত বন্দি, তা দুজনের বক্তব্যেই স্পষ্ট।

আর দু’টি কার্যালয়ের আধিকারিকদের একাংশ ইঙ্গিত দিয়েছেন: পরিকল্পনাহীন ভাবে বাড়ি তৈরি হলেও রাজনৈতিক চাপের জন্য তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন না। সরকারি আধিকারিক এবং পুরসভার দায় সারা মনোভাবের খেসারত দিচ্ছেন আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement