সোমনাথের মন্দিরে ফিরে বার্তা রাহুলের

বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, রাহুলের মন্দির দর্শন, এই নরম হিন্দুত্ব স্রেফ ভোটের টানে। অন্য সময়ে তো মন্দিরে যান না! সেই জবাবটা আজ দিলেন রাহুল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫১
Share:

পুজো: গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরে রাহুল গাঁধী। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

পরে কখনও যেন অভিযোগ তোলার সুযোগ না পায় বিজেপি— কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে এমন ভাবেই ইনিংস শুরু করলেন রাহুল গাঁধী। গুজরাতে লাগাতার ভোট প্রচারের ফাঁকে গত ক’মাসে বারবার তিনি সে রাজ্যের বিভিন্ন মন্দিরে গিয়েছেন। বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, রাহুলের মন্দির দর্শন, এই নরম হিন্দুত্ব স্রেফ ভোটের টানে। অন্য সময়ে তো মন্দিরে যান না! সেই জবাবটা আজ দিলেন রাহুল। কংগ্রেস সভাপতি হিসেেব প্রথম গুজরাত সফর শুরুই করলেন সোমনাথ মন্দিরে গিয়ে।

Advertisement

ভোটের সময়ে এই সোমনাথ মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েই তিনি রেজিস্ট্রারে অ-হিন্দু হিসেবে নাম লিখেছেন বলে বিতর্ক হয়। বিজেপির দিকে যড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে কংগ্রেস দাবি করে, রাহুল শিবভক্ত এবং পৈতেধারী হিন্দু। সেই সোমনাথেই আজ রীতিমতো পুজোর ডালা নিয়ে হাজির হলেন রাহুল। পরে বিজেপিকে জয়ের অভিনন্দন জানিয়ে ঘোষণা করেছেন, কংগ্রেস বিরোধীর ভূমিকা পালন করবে। রাহুলের সঙ্গে দেখা করে নির্দল বিধায়ক ভূপেন্দ্র কান্ত আজ যোগ দেওয়ায় কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে ৭৮ হয়েছে।

রাহুল গুজরাত গিয়েছেন ভোটের ফল পর্যালোচনায়। উত্তর, মধ্য, দক্ষিণ ও সৌরাষ্ট্র—রাজ্যকে চারটি ভাগে ভাগ করে সেই এলাকার নেতাদের সঙ্গে এ দিন তিনি আলাদা ভাবে বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি রিপোর্ট পান, দলের কিছু নেতা ভোটের সময়ে কাজ করেননি। পরে অমদাবাদে দলীয় কর্মী সম্মেলনের মঞ্চ থেকে রাহুল বলেন, ‘‘ভোটের সময় ৯০% দলের নেতা-কর্মী পুরো জোর দিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু ৫-১০% ছিলেন, যাঁরা দলের কাজ করেননি। আমি এই মঞ্চ থেকে আশ্বাস দিচ্ছি, এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দলের নেতাদের দাবি মেনেই ভোটের সময়ে কাজ না করা নেতা-কর্মীদের শাস্তির কথা ঘোষণা করেছেন রাহুল। তবে মুচকি হেসে এ-ও বলেছেন, ‘‘রেগে নয়, ভালবেসেই এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’ তিরস্কারের সঙ্গে পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন নতুন সভাপতি, ‘‘অনেকে পুরো উদ্যমে কাজ করেছেন। তাঁরা সংগঠনের সামনের সারিতে জায়গা পাবেন।’’

Advertisement

হারের কারণ সন্ধানে উঠে আসে মণিশঙ্কর আইয়ারের প্রসঙ্গ। স্থানীয় নেতারা জানান, মণিশঙ্করের মন্তব্যে দলের ক্ষতি হয়েছে। অল্পেশ ঠাকুর তো আজ মণিশঙ্করকে ‘বিজেপির এজেন্ট’ আখ্যা দিয়েছেন। দাবি ওঠে, একেক নেতার এক-এক রকম মন্তব্য বন্ধ করতে হবে। মণিশঙ্করকে আগেই সাসপেন্ড করেছেন রাহুল। আজ অমদাবাদে কর্মী সম্মেলনে বলেন, ‘‘যে-ই হোন, যত বড়ই হোন, কংগ্রেসের পাশে না দাঁড়ালে এই দলে আপনার কোনও ভবিষ্যৎ নেই।’’

নতুন কংগ্রেস সভাপতি যে ভাবে নিজের মতাদর্শ আঁকড়ে থাকার কথা বলছেন রাহুল, তাতে অনেকেই জওহরলাল নেহরুর নীতির ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। গুজরাতে ফিরে রাহুল ফের সেই মতাদর্শেই জোর দিয়ে বলেন, ‘‘গুজরাত কংগ্রেস দেখিয়ে দিয়েছে, একসঙ্গে, মতাদর্শ আঁকড়ে লড়লে, কংগ্রেস হারে না।’’

তবে কংগ্রেসের সামনে সব থেকে বড় ধাঁধা, শহরে কম ভোট পাওয়া। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও শহরের ভোটারদের দিকে নজর দিতে বলেছিলেন মনমোহন সিংহ। আজ পর্যালোচনায় উঠে আসে, জিএসটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও অরুণ জেটলি নিজে এসে আশ্বাস দেওয়ায় কাজ হয়েছে। রাহুল মনে করিয়ে দিয়েছেন, কৃষক, যুব ও মহিলাদের ভোট কংগ্রেস পেয়েছে। বিধানসভায় দলকে তাই আমজনতা ও চাষিদের স্বার্থে লড়তে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement