ফাইল চিত্র।
নাটকীয় কিছু না-ঘটলে, কর্নাটকে এই দফায় সম্ভবত ২৬ জুলাই শেষ হতে চলেছে বি এস ইয়েদুরাপ্পা যুগ। দু’বছর আগে এই দিনেই বিজেপি ক্ষমতায় ফিরেছিল রাজ্যে, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ফিরে পান তিনি। গত কাল ও আজ তিনি দফায় দফায় পদ ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও সরকারি ভাবে এখনও বাবার ইস্তফার বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি সাংসদ ছেলে রাঘবেন্দ্র।
স্থানীয় লিঙ্গায়েত সমাজপতি, মন্দির ও মঠের প্রধানরা এটাকে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। রাজ্যে লিঙ্গায়েত ভোট প্রায় ১৬%। কোট্টুরের বীরশিবা শিবযোগ মন্দিরের প্রধান তথা লিঙ্গায়েত ধর্মগুরু বাসবা স্বামীর অভিযোগ, আরএসএস উচ্চ বর্ণ ভিত্তিক সংগঠন। মুক্ত মানসিকতার নেতার অভাবে, লিঙ্গায়েতের প্রাধান্য মেনে নিতে পারছেন না। সঙ্ঘের চক্রান্তেই সরতে হচ্ছে ইয়েদুরাপ্পাকে।
রাজনৈতিক সূত্রের ইঙ্গিত, মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী, দলের সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ কর্তা বি এল সন্তোষ ও বিশ্বেশর হেগড়ে। আছেন বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক সি টি রবিও। এতে আরও চটেছেন লিঙ্গায়ত সমাজপতিরা। কারণ, প্রহ্লাদ, সন্তোষ, বিশ্বেশ্বর তিন জনেই ব্রাহ্মণ নেতা। আর রবি ভোক্কালিঙ্গা সমাজের, তায় শাসক পক্ষের ইয়েদুরাপ্পা-বিরোধী শিবিরের নেতা। ইয়েদুরাপ্পাকে সরাতে হলে আর এক জন লিঙ্গায়েতকেই কুর্সিতে বসানোর দাবি তুলেছেন লিঙ্গায়েত ধর্মগুরুরা। ।
মহারাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে বাসবা স্বামী বলেন, “মহারাষ্ট্রে মরাঠা যুবকেরা প্রাণপাত করে বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছিল। কিন্তু সঙ্ঘ ব্রাহ্মণ প্রার্থী দেবেন্দ্র ফডণবীশকে মুখ্যমন্ত্রী করে। এতেই মরাঠা সমাজের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে বিজেপি, পরে সে রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হয়। কর্নাটকেও কোনও ব্রাহ্মণকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে একই ফল হবে।’’ এই পরিস্থিতিতে ইয়েদুরাপ্পা কর্মীদের অনুশাসন মেনে চলার ডাক দিয়েছেন।
জল্পনার সূত্রপাত, গত শুক্রবার চাটার্ড বিমানে দিল্লি এসে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পর দিন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার সঙ্গে দেখা করার পরেই। সূত্রের মতে, রাঘবেন্দ্রকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ও আর এক ছেলে বিজয়েন্দ্রকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় নেওয়ার দাবি মানা হলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে রাজি হন ইয়েদুরাপ্পা। যদিও সে সময়ে ইস্তফার প্রশ্নে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি তিনি। জল্পনায় গত কাল ইন্ধন জোগায় ইয়েদুরাপ্পার টুইট। লেখেন, “আমার পরবর্তী পদক্ষেপ ২৫ জুলাই স্থির হবে। অনুগত কর্মী হিসেবে দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলব। দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ও কর্নাটকে ফের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করব।”
কর্নাটকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে কোনও ব্রাহ্মণ মুখ্যমন্ত্রী হননি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ব্রাহ্মণেরা। ভোক্কালিঙ্গাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। তাই বিধায়ক রবিকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে ভারসাম্যের রাজনীতি করার কথাও ভাবতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে।