আয়ুষী যাদবকে খুনের পর তাঁর দেহটি লাল স্যুটকেসে ভরে মথুরার যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে ফেলে দেন তাঁর বাবা, দাবি পুলিশের। ছবি: সংগৃহীত।
একটি নয়, দিল্লির বাসিন্দা আয়ুষী যাদবকে লক্ষ্য করে পর পর ২টি গুলি চালানো হয়েছিল। যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে উদ্ধার স্যুটকেসবন্দি আয়ুষীর দেহের ময়নাতদন্তের পর সেই রিপোর্টে এমনই জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে এমনটা জানিয়েছে মথুরা পুলিশ। তাদের দাবি, পরিবারের সম্মানরক্ষায় আয়ুষীকে খুনে তাঁর বাবা নীতেশ যাদবের মতোই সমান দোষী মা ব্রজবালা যাদব।
মথুরার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মার্তণ্ডপ্রকাশ সিংহ সংবামাধ্যমে জানিয়েছেন, আয়ুষীকে খুনের অভিযোগে রবিবার তাঁর বাবা নীতেশকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন তাঁর মাকে পাকড়াও করে পুলিশ। এই খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া, যে গাড়িতে করে আয়ুষীর দেহটি স্যুটকেসে ভরে মথুরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, তিন সদস্যের একটি চিকিৎসকের দল আয়ুষীর দেহের ময়নাতদন্ত করে। তদন্তকারীরা গোড়ায় জানিয়েছিলেন, আয়ুষীর বুকে একটি বুলেট লেগেছিল। তবে ময়নাতদন্তে দেখা গিয়েছে, পর পর দু’টি বুলেট লেগেছিল আয়ুষীর শরীরে। তার একটি আয়ুষীর বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। অন্যটি তাঁর মাথায় আটকে থাকে। ময়নাতদন্তের গোটা প্রক্রিয়াই ভিডিয়োবন্দি করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, দিল্লি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে বিসিএ পড়ার সময় ছত্রপাল গুর্জর নামে এক সহপাঠীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আয়ুষীর। বছরখানেক আগে বাড়ির অমতে মন্দিরে গিয়ে ছত্রপালকে বিয়ে করেন তিনি। তার পর থেকে ছত্রপালের বাড়িতে অহরহ যাতায়াত ছিল ২১ বছরের আয়ুষীর। তবে ছত্রপাল ভিন্ জাতের হওয়ায় এই বিয়েতে সায় ছিল না তাঁর মা-বাবার। এতে তাঁদের ‘সামাজিক সম্মানহানি’ হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এ ছাড়া, নিট পরীক্ষায় পাস করেও ডাক্তারি না পড়ে অন্য বিষয়ে পড়াশোনা করায়ও আয়ুষীর উপর রেগে ছিলেন তাঁরা। বিয়ের পর স্বামীর কাছে বার বার যাতায়াত করা নিয়ে মা-বাবা বাধা দিলে আয়ুষী নিজের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কথা জানাতেন বলেও দাবি।
তদন্তকারীদের আরও দাবি, বৃহস্পতিবার ছত্রপালের বাড়ি থেকে দিল্লির বদরপুরে নিজের বাড়িতে ফিরলে মা-বাবার সঙ্গে আয়ুষীর তুমুল তর্কাতর্কি শুরু হয়। ঝামেলার মধ্যেই নিজের বন্দুক থেকে আয়ুষীকে গুলি করেন তাঁর বাবা। এর পর স্ত্রীর সাহায্যে আয়ুষীর দেহ একটি প্লাস্টিকে মুড়ে স্যুটকেসবন্দি করে ফেলেন তিনি। এর পর মেয়ের স্যুটকেসবন্দি দেহটি গা়ড়িতে করে মথুরার যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে ফেলে আসেন।
১৮ নভেম্বর, শুক্রবার ওই স্যুটকেসটি দেখে পুলিশে খবর দেন কয়েক জন শ্রমিক। এর পর তদন্তে নেমে আয়ুষীর নাম-পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। মেয়েকে খুনের গ্রেফতার করা হয় বাবাকে। পরে তাঁর মাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, এই খুনে আয়ুষীর বাবাকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর মা এবং ভাই।