প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। শনিবার। ছবি: প্রেম সিংহ
‘উই উইল রিকোয়েস্ট সাইলেন্স’।
আজ সকাল সাড়ে ১০টা। প্রধান বিচারপতির এজলাসে তখন পা রাখারও জায়গা নেই। ছুটির দিন। বাকি সব এজলাস বন্ধ। তা সত্ত্বেও শীর্ষ আদালতের সবথেকে বড় এজলাসে আইনজীবীদেরই ভিড়ের ঠেলায় চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! রায় ঘোষণার আগে সবাইকে নীরব থাকার অনুরোধ করলেন প্রধান বিচারপতি।
কিন্তু ‘নীরবতা’ বজায় থাকল না। রায়ের পরেই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বৈঠক নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। গতকাল সকালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব ও পুলিশের ডিজি-কে দিল্লিতে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। ধরে নেওয়া হয়, সেখানে উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পরেই প্রশ্ন ওঠে, এই বৈঠক কি প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ?
সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, রায় ঘোষণার পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে জন্যই এই বৈঠক। কিন্তু আইনজীবীদের একাংশের প্রশ্ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কেন মাথা ঘামাবে? কারণ, এর আগে শবরীমালা রায়ে সুপ্রিম কোর্টই বলেছিল, আদালত আইনের বিচার করবে। সমাজে তার কী প্রভাব পড়বে, তা দেখা আদালতের কাজ নয়।
অযোধ্যার রায় ঘোষণার চাপ হালকা করতেই বোধহয় আজ প্রধান বিচারপতি দিল্লির এক পাঁচতারা হোটেলে বেঞ্চের বাকি চার বিচারপতিকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ করেন। সেখানে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি শরদ বোবদে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি এস আব্দুল নাজির হাজির ছিলেন।
তাতে অবশ্য প্রশ্ন থামেনি। প্রবীণ আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘‘দেশের মানুষ যথেষ্ট সচেতন। কেউ তাঁদের বিপথে চালিত করতে পারে না। তাই অশান্তির আশঙ্কার কোনও কারণ ছিল না। সর্বোপরি প্রধান বিচারপতি কোনও রাজ্যের মুখ্যসচিব-ডিজিকে ডেকে বৈঠক করছেন, ইতিহাসে এমন হয়নি। আদালতের কাজ রায় লেখা। আইনশৃঙ্খলা দেখার কাজ প্রশাসনের।’’
শনিবার ছুটির দিনে রায় ঘোষণা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আচমকা শুক্রবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, শনিবার রায় ঘোষণা হবে। আগামী সপ্তাহে বুধ থেকে শুক্রবার কোনও একদিন রায় হবে বলে মনে করা হচ্ছিল।
বিচারপতি বোবদে দু’দিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই মামলার রায়ের রাজনৈতিক প্রভাব পড়তেই পারে। কিন্তু তা তাঁরা দেখছেন না। মামলার রায় কোনও এক পক্ষে যাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তা করতে রাজি নন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর যুক্তি ছিল, তাঁরা শুধু সিদ্ধান্ত নেবেন। আজ রায়ের পরে প্রশ্ন উঠেছে, মসজিদ তৈরির পর থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত তার পূর্ণ অধিকার শুধু মুসলিমদের ছিল কি না, সেটা কেন মুসলিমদের প্রমাণ করতে হবে? একই মাপকাঠিতে হিন্দুদের কেন প্রমাণ দিতে হবে না? আইনজীবীদের মতে, আদালতের রায় এ নিয়ে নীরব।