প্রস্তাবিত রামমন্দিরের স্তম্ভ তৈরি চলছে অযোধ্যায়

অযোধ্যায় রামলালা বিরাজমানের দর্শনস্থলে আপনি স্বাগত। যাকে কেন্দ্র করে এত উত্তেজনা, এত আইনি লড়াই। পরম বিশ্বাসে যে-জায়গাকে রাম জন্মভূমি মেনে মন্দির তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে অযোধ্যায়।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

অযোধ্যা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

নিজস্ব চিত্র।

সামান্য উঁচু হয়ে থাকা জমিতে সাদা কাপড়ের ছোট্ট অস্থায়ী ছাউনি। চার দিক থেকে দড়ি দিয়ে টান করে বাঁধা। ফুট তিরিশের দূরত্ব, তার উপরে গ্রিলের ব্যবধান। ফলে সিংহাসনের মূর্তি নজরে এলেও চোখ-কান-মুখ স্পষ্ট ভাবে ঠাহর করা শক্ত। নির্বিকার মুখে চরণামৃত দিয়ে চলেছেন পুরোহিত। আর প্রতি মুহূর্তে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে সতর্ক জওয়ানদের চোখ জরিপ করছে আপাদমস্তক। একটু দেরি হলেই বরফঠান্ডা গলায় নির্দেশ আসছে, “আগে চলিয়ে। রুকনা নেহি হ্যায়।”

Advertisement

অযোধ্যায় রামলালা বিরাজমানের দর্শনস্থলে আপনি স্বাগত। যাকে কেন্দ্র করে এত উত্তেজনা, এত আইনি লড়াই। পরম বিশ্বাসে যে-জায়গাকে রাম জন্মভূমি মেনে মন্দির তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে অযোধ্যায়।

ছবি তোলার প্রশ্ন নেই। ক্যামেরা, মোবাইল থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছুই জমা দিতে হয়েছে এক-দেড় কিলোমিটার আগেই। নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই প্লাস্টিকের পেনও! রাস্তার দু’ধারে অগুনতি পুলিশ আর সিআরপিএফ। হাতে লাঠি কম, বন্দুক বেশি। তা-ও স্বয়ংক্রিয়। জিনিস জমা দেওয়ার পর থেকে রামলালার সামনে পৌঁছনো পর্যন্ত যে কত বার মেটাল ডিটেক্টর পেরিয়েছি, ইয়ত্তা নেই। খুঁটিয়ে দেহতল্লাশি হল অন্তত চার বার। পকেটে কিছু আছে কি না দেখতে পোক্ত হাতের মোচড় এতটাই কড়া যে, বেরিয়ে দেখি, ছিঁড়ে গিয়েছে সাত-পুরনো একশো টাকার একখানা নোটও!

Advertisement

আরও পড়ুন: গোলাপি বেলেপাথর, চন্দনকাঠের দরজা... কেমন দেখতে হতে পারে প্রস্তাবিত রামমন্দির? দেখে নিন

আরও পড়ুন: রামমন্দিরের ‘চাবি’ নিয়ে লুকোনো যাচ্ছে না ঝগড়া

যাওয়ার একটাই রাস্তা। একেবারে সরু। দু’দিক গ্রিল আর মোটা তারের জালে ঘেরা। পাশাপাশি দু’জন হাঁটারও জো নেই। ফেরার পথের শেষ দিক তুলনায় চওড়া। তবু দাঁড়ানোর অনুমতি নেই। ফিরতি পথে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আশপাশটুকু স্রেফ এক মিনিটের জন্য দেখতে যেতেই পিঠে হাত। মাথায় কালো ফেট্টি বাঁধা জলপাই উর্দি বললেন, “সিধা চলতে রহিয়ে।...পুরা নিকলকে তব দম লে না!”

বহু বার আসা পুণ্যার্থীরা বলছিলেন, নিরাপত্তার এই বজ্র আঁটুনি এখানে বছরভর। তবে রায় ঘোষণার পরে কড়াকড়ি আরও বেশি। চেন্নাই থেকে ছুটে আসা পেরুমল কিংবা বিহারের বাসিন্দা সরিতাদেবীর তাতে অভিযোগ নেই। বরং হাসি মুখে বলছিলেন, “সহজে কি আর ভগবানের দেখা মেলে?”

বেঙ্গালুরু থেকে এসেছেন কৃষ্ণ গৌড়, মহাদেব। তামিলনাড়ুর ত্রিচি থেকে মুরারি, মুরলীধরন। বিহার আর উত্তরপ্রদেশের অন্যান্য জেলা থেকেও ভক্তদের স্রোত ফের শুরু এ দিন থেকে। সব্বাই আদালতের রায়ে উৎফুল্ল। রামলালার সামনে দাঁড়িয়ে সুধীর পাণ্ডেকে বিড়বিড় করতে শুনলাম, “এত বছর অনেক কষ্ট করেছ রামলালা। আর এ ভাবে থাকতে হবে না। এ বার মন্দির হবে।” কেউ বলছেন, “ভগবানের ঘর ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ বার তা ফেরত আসবে নিশ্চয়। তাড়াতাড়ি হোক, এটাই প্রার্থনা।” কেউ বলছেন, রামলালা বাচ্চা ছেলের মতো। তার কি এমন অষ্টপ্রহর পাহারা আর ঘেরাটোপ ভাল লাগে?

চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে একটু সাহস করেই এঁদের এক জনকে প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা, দেশে তো কত জনের মাথায় ছাদ নেই। তাঁদের বাড়ির জন্যও একই ভাবে প্রার্থনা করবেন? একই উদ্যমে লড়বেন? উত্তর এল, “সে ব্যবস্থাও তো করবেন রামলালাই। প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনা আছে না!”

এই অটুট বিশ্বাসের সাক্ষী হয়েই দেখি, পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু হাসছেন জলপাই উর্দি। বললেন, “রামলালা সত্যিই জাগ্রত। অন্তত আমার বাড়ির লোক তা মানে। দেখুন না, গত বছর পর্যন্ত কাশ্মীরে ডিউটি ছিল। প্রাণ হাতে করে, ওই ঠান্ডায়। তার থেকে তো এখানে ঢের ভাল। তাই না?”

বিশ্বাস!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement