কর্মশালার ভিতরে এ ভাবেই রাখা রয়েছে পাথর কেটে তৈরি মন্দিরের অংশ। —ফাইল চিত্র
অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির তৈরির পক্ষে রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। রায়ের পর থেকেই নানা মহলে জল্পনা— কেমন হতে পারে সেই মন্দির, সম্পূর্ণ হতে কত দিন লাগতে পারে। গত তিন দশক ধরে মন্দিরের কাঠামো তৈরি করে চলেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইপি)-র অধীনে ‘রাম জন্মভূমি ন্যাস’। লক্ষ লক্ষ পাথর কেটে, তার উপর খোদাই করে অযোধ্যার ওয়ার্কশপে সেই কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভিএইপি-র এই নকশা এবং নির্মাণশৈলী মেনে মন্দির তৈরি হলে লেগে যেতে পারে আরও পাঁচ বছর।
কিন্তু কেমন হতে পারে মন্দিরের নকশা? সেটা বোঝার আগে ‘রাম জন্মভূমি ন্যাস’-এর কর্মশালায় কী কর্মকাণ্ড চলছে গত ৩০ বছর ধরে, তার দিকে একটু নজর ঘোরানো যাক। অযোধ্যার করসেবকপুরমে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যালয় থেকে এক কিলোমিটার দূরে এবং বিতর্কিত রাম জন্মভূমির মূল জমি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠে এই ওয়ার্কশপ। সেখানেই শুরু হয় রামমন্দিরের কাঠামো তৈরির কাজ। একটি কাঠের প্রতিকৃতি বানিয়ে সেই অনুযায়ী ওই কর্মশালার কর্মীরা মন্দিরের এক একটি অংশ বানাতে শুরু করেন। রাজস্থান থেকে বিশাল বিশাল পাথর এনে সেগুলি মাপমতো কেটে খোদাই করে এক একটি অংশ তৈরি হচ্ছিল।
মন্দির তৈরির জন্য অযোধ্যায় ‘রাম জন্মভূমি ন্যাস’-এর কর্মশালায় প্রথম পাথর এসেছিল ১৯৮৯ সালে, রাজস্থানের ভরতপুরের বাঁসিপাহাড় থেকে। তার পর থেকে লাগাতার কাজ চলছে। এমনকি, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে ‘রাম জন্মভূমি নিবাস’-এর কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা হলেও মন্দির তৈরির প্রস্তুতির কাজে ছেদ পড়েনি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘিরে কর্মশালাতেও তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। রায়দানের আগে কিছু দিনের জন্য সেই কর্মশালায় বন্ধ ছিল কাজ। শনিবারের রায়ের পরে সেই কাজ আবার শুরু হয়েছে নতুন করে, নতুন উদ্যমে এবং আগের চেয়েও বেশি গতিতে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এই মডেল এবং নির্মাণশৈলী মেনে কাজ চললে মন্দির তৈরিতে আরও অন্তত পাঁচ বছর লেগে যেতে পারে, বলছেন ওয়ার্কশপের সুপারভাইজার অন্নুভাই সোমপুরা। তাঁর ব্যাখ্যা, প্রায় তিন দশক ধরে মাত্র অর্ধেক কাজ শেষ করা গিয়েছে। এখন রায়ের পর যতই গতি আসুক, বাকি অর্ধেক কাজ শেষ হতে আরও অন্তত পাঁচ বছর লাগতে পারে বলেই মনে করছেন অন্নুভাই। যদিও রাম জন্মভূমি ন্যাস তথা ভিএইচপি নেতা শরদ শর্মা যদিও মনে করেন, আরও দুই থেকে আড়াই বছর লাগবে। তাঁর যুক্তি, ‘‘পাথর কেটে যে অংশগুলি তৈরি হয়েছে, সেগুলি মূল মন্দির চত্বরে আনতেই লেগে যাবে অন্তত ছ’মাস। তার পরেও পুরো মন্দির তৈরিতে দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগবেই।’’ শরদ শর্মা বলছেন, কাজ শুরু হওয়ার পরে দু’-আড়াই বছর। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো ট্রাস্ট গঠন, তার পর আরও অনেক প্রশাসনিক কাজকর্ম শেষ করে কাজ শুরু হতেই আরও বেশ কিছুদিন লাগবে।
রাম জন্মভূমি নিবাসের এই কর্মশালাতেই চলছে মন্দিরের অংশ তৈরির কাজ। —ফাইল চিত্র
আরও পড়ুন: প্রথমে গুন্ডামি করে মসজিদটা ভাঙা হল, তার পরে আদালত বলল ওখানে মন্দির হবে!
মন্দিরের অবয়ব কেমন হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত জানিয়েছেন এই শরদ শর্মা। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ১২৮ ফুট উঁচু সুবিশাল দোতলা মন্দিরের পুরোটাই তৈরি হবে গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে। সেই পাথর আনা হচ্ছে রাজস্থানের বাঁসপাহাড়ি থেকে। মন্দিরের মোট উচ্চতা হবে ১২৮ ফুট, লম্বা ২৬৫ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং চওড়া ১৪০ ফুট। এর মধ্যে গম্বুজ ও ভিত্তিপ্রস্তর বাদ দিয়ে একতলা হবে ১৮ ফুট উঁচু, দোতলা ১৫ ফুট ৯ ইঞ্চি।
শরদ শর্মা জানিয়েছেন, মোট ছটি ভাগ থাকবে মন্দিরের— অগ্র দ্বার, সিংহ দ্বার, নৃত্য মণ্ডপ, রং মণ্ডপ, পরিক্রমা এবং গর্ভগৃহ। এক লক্ষ ৭৫ হাজার ঘনফুট পাথর দিয়ে তৈরি হবে রামমন্দির। তার মধ্যে প্রায় এক লক্ষ ঘনফুট পাথর কাটা হয়ে গিয়েছে। বাকি অংশের কাজ চলছে। ‘‘মন্দিরে থাকবে ২১২টি পিলার (প্রতি তলায় ১০৬টি করে) সেগুলি আবার তিন রকমের। একতলার পিলারগুলি সাড়ে ১৬ ফুট লম্বা, আর দোতলার পিলারগুলি হবে সাড়ে ১৪ ফুট। প্রতিটি পিলারে থাকবে যক্ষ-যক্ষিণীর ১৬টি করে মূর্তি।’’
পাথর কেটে তৈরি বিশাল বিশাল অংশ রাখা রয়েছে কর্মশালায়। —ফাইল চিত্র
আরও পডু়ন: অযোধ্যা রায়ে ‘মোদীর জয়’ দেখছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম, অন্য মত পাক মিডিয়ার একাংশের
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নকশা মেনে মন্দির হলে নির্মাণশৈলীর দিক থেকেও মন্দির হবে অভিনব। কারণ মন্দিরে ‘কোনও সিমেন্ট বালি বা লোহার ব্যবহার হবে না’, বলেছেন শরদ শর্মা। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, পুরো মন্দিরটির ভার বহন করবে ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি উঁচু একটি ‘ফাউন্ডেশন প্ল্যাটফর্ম’। গর্ভগৃহের ঠিক উপরেই ১৬ ফুট ৩ ইঞ্চির একটি বেদি তৈরি হবে, যার উপরে থাকবে রামের মূর্তি। আর এর উপরে তৈরি হবে ১৩২ ফুট উঁচু গম্বুজ। মন্দিরে থাকবে ২৪টি দরজা।