Ayodhya Case

শুনানি শেষ, রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার সুপ্রিম রায় ২৩ দিন পরে?

শুনানির জন্য এ দিন আরও কিছুটা সময় চেয়েছিলেন এক আইনজীবী। তার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে। আজ বিকেল পাঁচটায় অযোধ্যা শুনানি শেষ হতেই হবে।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ১১:২২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

চল্লিশতম দিনের মাথায় অযোধ্যা মামলার শুনানি পর্বে ইতি টানল সুপ্রিম কোর্ট। তবে ১৩৪ বছরের এই মামলার রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। আগামী ১৭ নভেম্বর অবসর নিতে চলেছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। মনে করা হচ্ছে তার আগেই দেশের সবচেয়ে বেশি আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করবে শীর্ষ আদালত।

Advertisement

মঙ্গলবারই ঠিক হয়েছিল— বুধবার মামলার যে দৈনিক শুনানি চলছিল তা গুটিয়ে ফেলা হবে। বুধবার সকালে, শুনানির শুরুতেই আরও কয়েক দিনের সময় চান এক আইনজীবী। কিন্তু পত্রপাঠ তা খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তিনি বলেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে। আজ বিকেল পাঁচটায় অযোধ্যা শুনানি শেষ হতেই হবে।’’

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির ওই সাংবিধানিক বেঞ্চ অবশ্য মামলার সব পক্ষকেই বিতর্কের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় চিহ্নিত করা এবং জমা দেওয়ার জন্য আরও তিন দিন সময় দিয়েছেন। এই পর্বের দৈনিক শুনানি চল্লিশতম দিনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে দ্বিতীয় দীর্ঘতম মামলার তকমাও আদায় করে নিয়েছে। এর আগে ৬৮ দিন ধরে চলেছিল কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরল রাজ্য সরকারের মামলা।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিজয়ার প্রণাম করতে এসে খুন, জিয়াগঞ্জ কাণ্ডে গ্রেফতার রাজমিস্ত্রি, সৌভিকও​

এ দিন ঘটনাবহুল ছিল আদালত কক্ষ। দিনের শুরুতেই মামলায় নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল হিন্দু মহাসভা। কিন্তু, শীর্ষ আদালত সেই আবেদন নাকচ করে দেয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা মামলার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে আগেই প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ সময়ে বক্তব্য শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম।’’

বেলা যত বেড়েছে, ততই মামলা নিয়ে দেশ জুড়ে আগ্রহের পারদও চড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে আদালতের ভিতরেও তৈরি হয়েছে একের পর এক নাটকীয় মুহূর্ত। এ দিন কুণাল কিশোরের লেখা একটি বই আদালতে রাম জন্মভুমির প্রমাণ হিসাবে পেশ করার চেষ্টা করেন হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বিকাশ সিংহ। তার প্রতিবাদ করেন মুসলিম ওয়াকফ বোর্ডের প্রবীণ আইনজীবী রাজীব ধবন। তিনি কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতেই ওই বই ছিঁড়ে ফেলার জন্য বিচারপতিদের কাছে ‘অনুমতি’ চান। বিরক্ত হয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘যা ইচ্ছে, তাই করুন।’’ তার পরই বইয়ের পাতা ও মানচিত্র ছিঁড়ে ফেলেন রাজীব। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিচারপতিরা। প্রধান বিচারপতি বলেও বসেন, ‘‘এমন চললে আমরা উঠব আর সোজা বেরিয়ে চলে যাব।’’ শেষ পর্যন্ত টান টান নাটকের মধ্যেই এ দিন রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার শুনানি পর্ব শেষ হয়।

আরও পড়ুন: অযোধ্যা শুনানিতে চূড়ান্ত নাটক, ম্যাপ ছিঁড়লেন আইনজীবী, ওয়াক আউটের হুমকি প্রধান বিচারপতির

নিরাপত্তার স্বার্থে গত ১৪ অক্টোবর থেকে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অযোধ্যায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ দিন আরও কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, ওই জেলায় নৌকা চালানো, বাজি তৈরি বা বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত করে দেওয়া এলাকায় দোকান ও গোডাউন খোলা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্য ছাড়া দেওয়া হয়েছে।

কে কী বললেন?

• বুধবার শুনানির প্রথম দিকেই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে, বিকেল পাঁচটার মধ্যেই শেষ মামলার শুনানি পর্ব করতে হবে।’’

• অন্যতম মামলাকারী মহম্মদ ইকবাল আনসারি বলেন, ‘‘প্রত্যেকের আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত। দেশে উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। দেশে শান্তি থাকা উচিত।’’

• রামলালা বিরাজমানের পক্ষে আইনজীবী সিএস বৈদ্যনাথন বলেন, ‘‘হিন্দু ও মুসলিম দু’পক্ষই ওই এলাকায় প্রার্থনা করত। ব্রিটিশরা একটি লোহার রেলিং দিয়ে রেখেছিল। রাম চবুতরাকে তখনই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এখন মুসলিমরা ওই ছোট্ট এলাকাটা ভাগ করতে চাইছে।’’

• বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বৈদ্যনাথনকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘১৮৫৫ সালের আগে কী ছিল আমরা তা বুঝতে পেরেছি। রেলিং দেওয়ার পর পরিস্থিতি কী হল? ’’

• সুপ্রিম কোর্টে নতুন রিপোর্ট জমা দেয় মধ্যস্থতাকারী প্যানেল। যদিও সেই রিপোর্ট প্রকাশ্য়ে আনা হয়নি।

• নির্মোহী আখড়ার আইনজীবী সুশীল জৈন বলেন, ‘‘বাবর যে মসজিদ তৈরি করেছিলেন তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে মুসলিম পক্ষ।’’

• রাম জন্মভূমির প্রমাণ হিসাবে আদালতে কুণাল কিশোরের একটি বই ও মানচিত্রকে প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরেন হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বিকাশ সিংহ। তা ছিঁড়ে দেন সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী রাজীব ধবন।

• এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই ভাবে যদি শুনানি চলে, তাহলে আমরা এখান থেকে উঠে চলে যাব।’’

• এ দিন দ্বিতীয় দফায় শুনানি শুরু হতেই, আইনজীবী রাজীব ধবন বলেন, ‘‘আমার মানচিত্র ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। আমি এটা কোর্টের নির্দেশেই করেছি। আমি বলি, আমি এই মানচিত্রটা ছুড়ে ফেলে দিতে চাই। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি চাইলে ওটা ছিঁড়ে ফেলতে পারেন।’’ রাজীবের মন্তব্যে সহমত হন প্রধান বিচারপতিও।

• হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বরুণ সিংহ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট রায়দান স্থগিত রেখেছে এবং পরিষ্কার করে দিয়েছে, এই মামলায় আগামী ২৩ দিনের মধ্যে রায় জানানো হবে।’’

• মামলার মূল আবেদনকারী নির্মোহী আখড়ার রাম দাস বলেন, ‘‘শুনানি শেষ হওয়ায় আমরা খুব খুশি। আমরা নিশ্চিত যে সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষেই যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement