লাদাখে চিনের সঙ্গে সঙ্ঘাতের জেরে সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজতে তৎপর হয়ে উঠেছে সেনা। বিদেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনার কথা চলছে।
লাদাখের পরিস্থিতিতির কথা মাথায় রেখে ইজরায়েলের কাছ থেকে ৪০০টি হাউইৎজার কামান ‘এথোজ’ কিনতে উদ্যোগী হয়েছে সেনা। তাতেই আপত্তি তুলেছেন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর ডিরেক্টর তথা বিজ্ঞানী শৈলেন্দ্র ভি গড়ে।
অত্যাধুনিক অ্যাডভান্সড টোড আর্টিলারি গান সিস্টেম (এটিএজিএস) প্রকল্পের নেতৃত্বে রয়েছেন শৈলেন্দ্র। তাঁর মতে, ৯৫ শতাংশ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এডিএজিএস হউইৎজার কামানগুলি বিশ্বসেরা। তাই বাইরে থেকে কামান কেনার কোনও প্রয়োজন নেই।
শৈলেন্দ্র যে কামানটিকে বিশ্বসেরা বলে উল্লেখ করেছেন, ৮ বছর আগে পূর্বতন ইউপিএ জমানায় তার যাত্রা শুরু। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতকে ‘আত্মনির্ভর’ করে তুলতে এই কামানই কাজে আসবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ভারত ফোর্জ লিমিটেড এবং টাটা পাওয়ার এসইডি, যৌথ ভাবে এই প্রকল্পে যুক্ত। প্রকল্পে যোগ দেওয়ার মাত্র ৩০ মাসের মধ্যে প্রথম দেশীয় প্রযুক্তির কামানটি তৈরি করে ফেলতে সক্ষম হয় তারা।
তার পর থেকে গত ৪ বছরে এটিএজিএস কামান নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। সেনাবাহিনীর হাতে থাকা সমস্ত কামানের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এই কামানটিকেই এগিয়ে রাখছেন সকলে। কারণ গোটা বিশ্বে আর কোনও হাউইৎজার কামান বাই মডিউলার চার্জ সিস্টেম জোন৭ গোলা ছুড়তে পারে না।
শুধু তাই নয়, ১৫৫ মিলিমিটার ব্যাস যুক্ত নল রয়েছে যে সমস্ত কামানে, তার মধ্যে একমাত্র এটিএজিএস-ই ৪৮ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। এ ছাড়াও এই কামানে অক্সিলারি পাওয়ার মোড, স্বয়ংক্রিয় নির্দেশ এবং নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে। ‘ওয়্যারলেস স্টেট অব দ্য আর্ট কমিউনিকেশন সিস্টেম’ও রয়েছে এই কামান প্রযুক্তিতে। তার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রত্যেকটি কামান প্রযুক্তির মধ্যে সংযোগ বজায় থাকে। এমনকি রাতের অন্ধকার ভেদ করে শত্রুপক্ষকে খুঁজে বার করার জন্য প্রয়োজনীয় নাইট ভিশন প্রযুক্তিও রয়েছে।
ডিআরডিও জানিয়েছে, বার্স্ট মোডে রাখলে মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ৩ রাউন্ড গোলা দাগতে পারে এই কামান। আর সাসটেইন্ড মোডে রাখলে এই কামান থেকে ৬০ মিনিটে ৬০ রাউন্ড গোলা দাগা যাবে। সব মিলিয়ে এই কামানটির ওজন প্রায় ১৮ টন। কামানের নলটির দৈর্ঘ্যই শুধুমাত্র ৬ হাজার ৮৭৫ মিলিমিটার। এক একটি কামান পরিচালনা করতে ৬ থেকে ৮ জনের দল প্রয়োজন।
বিগত ৫ বছর ধরে এটিএজিএস কামান নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। প্রতিবারই পরীক্ষায় সফল হয়েছে এই কামান। এ বছর অক্টোবরে কামানগুলির চূড়ান্ত পর্য়ায়ের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাতে সফল হলে সরাসরি ভারতীয় সেনার হাতে উঠবে কামানগুলি। পরীক্ষা চলাকালীন এর আগে ওই কামান থেকে ১৩০ রাউন্ডের বেশি গোলা দাগা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত ফোর্জ লিমিটেড।
শৈলেন্দ্র জানিয়েছেন, ১৫৮০টি টোড আর্টিলারি কামান হাতে চায় ভারতীয় সেনা। তা ছাড়াও ১৫০টি এটিএজিএস, ১১৪টি ধনুষ কামান চাই তাঁদের। অর্থাৎ ১৮০০-র বেশি কামান প্রয়োজন ভারতের। এটিএজিএস-এর অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমেই তা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব বলে দাবি শৈলেন্দ্র।
এতদিন ভারতীয় সেনাবাহিনী বফর্সের কামানের প্রতি অনুরক্ত ছিল। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে সেটি ব্যাপক সাফল্য এনে দিয়েছিল। কিন্তু এটিএজিএস-কে বফর্সের চেয়েও এগিয়ে রাখছে ডিআরডিও। কারণ বফর্স মাত্র ৩২ কিলোমিটার পর্যন্তই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। তাই বিদেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র না কিনে দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই অস্ত্রভাণ্ডার তৈরির পক্ষে অনেকে।