কৃষক আন্দোলনের অভিঘাতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কিছুটা ধাক্কা খেলেও অওধ, পূর্বাচল, বুন্দলখণ্ডের মতো এলাকায় এসপি জোটের তুলনায় পদ্ম-শিবির অনেকটাই এগিয়ে থাকবে বলে এবিপি নিউজ- সি ভোটার সমীক্ষা জানাচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে সহযোগীদের নিয়ে ৩২৫টি জিতেছিল বিজেপি।
যোগী আদিত্যনাথ। ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশে এ বার মোট ভোট এবং আসন বাড়তে পারে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র নেতৃত্বাধীন জোটের। কিন্তু তাতে বিজেপি-র ‘যাত্রাভঙ্গ’-এর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না! সোমবার সে রাজ্যের বিধানসভা ভোটের বুথ ফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত, এ বারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
ভারতে ভোট-রাজনীতির ইতিহাস বলছে, অনেক সময়েই বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস মেলে না। আবার বুথ ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে ভোটের প্রকৃত ফল মিলে যাওয়ার কিছু উদাহরণও রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি, পঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড এবং মণিপুরেও এ বার বিধানসভা ভোট হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট চার রাজ্যের বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাসও প্রকাশিত হয়েছে সোমবার।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এবিপি নিউজ-সি ভোটার সমীক্ষার ইঙ্গিত, উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি এবং তার সহযোগীরা মিলে ২২৮-২৪৪টি আসন জিততে পারে। এসপি-র নেতৃত্বাধীন জোট ১৩২-১৮৮, বিএসপি ১৩-২১, কংগ্রেস ৪-৮ এবং নির্দল ও অন্যেরা ২-৬ টি আসন পেতে পারে বলে ওই সমীক্ষার ইঙ্গিত।
কৃষক আন্দোলনের অভিঘাতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কিছুটা ধাক্কা খেলেও অওধ, পূর্বাচল, বুন্দলখণ্ডের মতো এলাকায় এসপি জোটের তুলনায় পদ্ম-শিবির অনেকটাই এগিয়ে থাকবে বলে এবিপি নিউজ-সি ভোটার সমীক্ষা জানাচ্ছে। ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে সহযোগীদের নিয়ে ৩২৫টি জিতেছিল বিজেপি। একক ভাবে ৩১২টি। এ বার বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপি-কে সবচেয়ে বেশি আসন দিয়েছে টুডে’স চাণক্য— ২৯৮টি।
অন্য দিকে, গত বার ৪৭ আসন জেতা অখিলেশের দলের ঝুলিতে দ্বিগুণেরও বেশি বিধানসভা কেন্দ্র আসতে পারে বলে প্রায় সবগুলি সমীক্ষার পূর্বাভাস। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর দল বিএসপি এবং রাহুল-প্রিয়ঙ্কার কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে এ বারের ভোটে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে বলেও ওই সমীক্ষাগুলিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে পঞ্জাবে প্রথম বার বিধানসভা ভোটে লড়তে নেমেই শিরোমণি অকালি দলকে পিছনে ফেলে প্রধান বিরোধী দল হয়েছিল অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি (আপ)। এ বার তারা নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেতে পারে বলেও বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত। যদিও এবিপি নিউজ-সি ভোটার সমীক্ষা জানাচ্ছে, ১১৭ বিধানসভা আসনের পঞ্জাবে আপ পেতে পারে ৫১-৬১টি আসন। অর্থাৎ একক বৃহত্তম দল হলেও তারা নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠাতা পাবে না। কংগ্রেস, ২২-২৮টি। শিরোমণি অকালি দল ২০-২৮ টি আসন পেতে পারে বলে ওই সমীক্ষার ইঙ্গিত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহের পঞ্জাব লোক কংগ্রেস এবং বিজেপি-র জোটের ঝুলিতে যেতে পারে ৭-১৩টি আসন। নির্দল অন্যেরা ১-৫টি আসন পেতে পারে।
দক্ষিণ পঞ্জাবের মালওয়া অঞ্চলের কংগ্রেসের দলিত ভোটব্যাঙ্কের অনেকটাই আপের দখলে যেতে পারে বলে কয়েকটি বুথ ফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত। দলিত নেতা চরণজিৎ সিংহ চন্নীকে মুখ্যমন্ত্রী করেও কংগ্রেস তেমন সুফল পাবে না বলে ওই সমীক্ষাগুলিতে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অমৃতসর-কেন্দ্রীক মাঝা অঞ্চলেও আপের ভাল ফলের পূর্বাভাস মিলেছে কয়েকটি সমীক্ষায়। টুডে’স চাণক্যের পূর্বাভাস, আপ জিততে পারে ১০০টি আসনে!
গোয়ায় এ বার তৃণমূলের আসন জেতার সম্ভাবনার ইঙ্গিত রয়েছে এবিপি নিউজ-সি ভোটার সমীক্ষায়। ওই বুথ ফেরত সমীক্ষা জানাচ্ছে, গোয়ায় এ বার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। ৪০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১৩-১৭, কংগ্রেস-গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির জোট ১২-১৬, তৃণমূল-মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির জোট ৫-৯ এবং নির্দল ও অন্যেরা ০-২টি আসনে জিততে পারে। আবার জন কি বাত, টাইমস ভিটো-র মতো কয়েকটি বুথ ফেরত সমীক্ষার দাবি, বিজেপি-কে টপকে কংগ্রেসই গোয়ায় ক্ষমতা দখলের দৌড়ে এগিয়ে থাকবে।
বিজেপি-র দখলে থাকা রাজ্য উত্তরাখণ্ডেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত রয়েছে বিভিন্ন বুথ পেরত সমীক্ষায়। এবিপি নিউজ-সি ভোটার সমীক্ষায় উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখা হলেও ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া, টুডে’স চাণক্য এগিয়ে রেখেছে বিজেপি-কে। এবিপি নিউজ-সি ভোটার সমীক্ষার ইঙ্গিত হিমালয় ঘেরা ওই রাজ্যের ৭০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে কংগ্রেস ৩২-৩৮ এবং বিজেপি ২৬-৩২টিতে জিততে পারে। অন্যেরা পেতে পারে ৩-৭টি আসন। অন্য দিকে টুডে’স চাণক্যের পূর্বাভাস ৪৩ আসনে জিতে এ বারও নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাবে বিজেপি। কংগ্রেসের জুটতে পারে ২৪টি।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরেও শাসকদল বিজেপি ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বলে বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত। সে রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ২৩-২৭টি এবং কংগ্রেস ১২-১৬টি কেন্দ্রে জিততে পারে বলে এবিপি নিউজ- সি ভোটার সমীক্ষার পূর্বাভাস। পড়শি রাজ্য মেঘালয়ের শাসক দল এনপিপি পেতে পারে ১০-১৪ আসন। আর এক পড়শি রাজ্য নাগাল্যান্ডের শাসক দল এনপিএফ ৫-৮টি আসনে জিততে পারে বলে ওই সমীক্ষার পূর্বাভাস।