মধ্যপ্রদেশে উত্সাহী ভোটাররা। এ বারই প্রথম ভোট তাঁদের। ছবি সৌজন্য: এএনআই টুইটার।
মধ্যপ্রদেশ এবং মিজোরামে বিধানসভা নির্বাচন আজ। কেন্দ্রে ক্ষমতায় কোন দল আসতে চলেছে তার অনেকটাই আভাস পাওয়া যাবে এই সেমিফাইনালে। বুধবার সকাল সাতটা থেকে দুই রাজ্যেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই দুই রাজ্যেই এক দফায় ভোটগ্রহণ হবে। সকাল ১০টা পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশে ভোট পড়েছে ৬.৩ শতাংশ। অন্য দিকে মিজোরামে সকাল ১১টা পর্যন্ত ভোটের হার ২৯ শতাংশ।
মধ্যপ্রদেশে বড় চ্যালেঞ্জ শিবরাজ সিংহ চৌহানের সামনে। মধ্যপ্রদেশে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। গত বার রাজ্যের ২৩০টি আসনের মধ্যে ১৬৫টি ছিল বিজেপির দখলে। কংগ্রেসের ৫৮। কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল ৯ শতাংশ। এই বিধানসভা নির্বাচনে ৪-৫ শতাংশ ভোট এদিক-ওদিক হলেই রং বদলাবে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভোটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বেতুল বিধানসভা কেন্দ্রটি। ১৯৫৭ থেকে এই কেন্দ্রটিই প্রত্যেকটি ভোটে নজর কাড়ছে। দেখা গিয়েছে, যে দল এই আসনটি জিতেছে, তারাই মধ্যপ্রদেশে সরকার গড়েছে। তাই এ বারও সকলের নজরে থাকছে এই বেতুল।
পদ্ম না হাত! শেষ হাসিটা কে হাসবে নির্ধারিত হয়ে যাবে আজই। শিবরাজ সিংহ চৌহান কি পারবেন তাঁর গদি বাঁচিয়ে রাখতে, না কি রাহুল গাঁধী এ খেলায় বাজিমাত করবেন? ভোট শুরুর আগে থেকেই এ নিয়ে ছিল বিস্তর চর্চা, জল্পনা, রাজনৈতিক প্রচার। সেই সমান গতিতেই চর্চা চলছে ভোটের দিনও। এ দিন সকাল থেকেই ইভিএমে বন্দি হচ্ছে একের পর এক ভোট। আর সেই সঙ্গে ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে দু’দলেরই। তবে ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে ১১ ডিসেম্বর। ওই দিনই ভোটগণনা হবে মধ্যপ্রদেশ ও মিজোরামের পাশাপাশি রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় এবং তেলঙ্গানায়।
আরও পড়ুন: শিবরাজের তরী বাঁচবে তো? ভোটের চিন্তায় স্বস্তিতে নেই অমিত
সকাল থেকেই লম্বা লাইন পড়েছে মধ্যপ্রদেশের একটি বুথে।
তবে এ দিন বিক্ষিপ্ত দু’একটা ঘটনা ছাড়া মধ্যপ্রদেশে তেমন বড় কিছুর খবর পাওয়া যায়নি। উজ্জয়িনী এবং বুরহানপুরে ভোট চলাকালীন চারটি ইভিএমে গণ্ডগোল দেখা দেয়। অন্য দিকে, আলিরাজপুরে ১১টি ভিভিপ্যাট-এ সংস্যা দেখা দেয়। যদিও সবক’টি তড়িঘড়ি পাল্টে দিয়ে আবার ভোট চালু করা হয়েছে। ভোপালের সেন্ট মেরিতে একটি বুথের দু’শো মিটারের মধ্যে বিজেপির এক এজেন্ট প্রচার চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়েই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। ধৃতের কাছে থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। অন্য দিকে ভোট চলাকালীন গুনাতে এক নির্বাচন আধিকারিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আরও পড়ুন: উত্তর-পূর্বে কংগ্রেসের শেষ দুর্গে লড়াই আজ
এ দিন সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলেন, “আজ মধ্যপ্রদেশের ভোট। রাজ্যের ভোটদাতাদের কাছে আবেদন আপনারা সকলে ভোট দিন। আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুন।”
নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া শিবরাজ সিংহ চৌহান। রাজ্যের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং কৃষকদের অবস্থা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। কিন্তু শিবরাজ বিরোধীদের সেই অভিযোগকে খারিজ করে দিয়ে হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ বারও ক্ষমতায় আসছে বিজেপিই। রাজ্যের এ প্রান্ত ও প্রান্ত চষে বেরিয়েছেন তিনি। ভোটের সকালেও তাঁকে দেখা যায় বুধনিতে নর্মদা নদীতে যেতে। সেখানে গিয়ে তিনি পূজা-অর্চনা করেন। শিবরাজ বলেন, “১০০ শতাংশ নিশ্চিত বিজেপি এ বারও জিতবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। আমাদের লক্ষ্য ২০০ আসন। দলের কর্মী-সমর্থকরা সেটাকে বাস্তবায়িত করবেই।”
এ দিন সকাল সকাল ছিন্দওয়াড়াতে ভোট দেন কংগ্রেস নেতা কমলনাথ। তিনি বলেন, “মধ্যপ্রদেশের মানুষের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। এ রাজ্যের মানুষগুলো সাদাসিধে। আর সেই মানুষগুলোকেই বছরের পর বছর ধরে লুঠছে বিজেপি। এ বার সময় এসেছে তার জবাব দেওয়ার।” শিবপুরীতে ভোট দেন বিজেপির যশোধারা রাজে সিন্ধিয়া। তিনি কংগ্রেসের সিদ্ধার্থ লাডার বিরুদ্ধে লড়ছেন।
অন্যদিকে, উত্তর-পূর্বের একমাত্র কংগ্রেস শাসিত রাজ্য হল এই মিজোরাম। মোট ৪০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে গতবার ৩৪টি আসন পেয়ে সরকার গড়লেও এ বার কিন্তু কংগ্রেসের সামনে কঠিন লড়াই। এই রাজ্যে ১,১৭৯টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। তার মধ্যে ৪৭টি সংবেদনশীল হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। তাই সেখানে এ দিন সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় ভোটপর্ব চলছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ৪০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং প্রচুর রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে নির্বিঘ্নে নির্বাচন পর্ব জারি রাখতে।
(ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদেরদেশবিভাগে।)