National News

ছিন্দওয়াড়ার মসিহা, নাকি গ্বালিয়রের মহারাজা, মুখ্যমন্ত্রী কে? বল সেই রাহুলের কোর্টেই

রাহুল গাঁধীর সামনে এ বার তৃতীয় ‘হার্ডল’ মধ্যপ্রদেশে। কমল নাথ, না কি জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া— মুখ্যমন্ত্রী কে? জোর টানাপড়েন শুরু ১৫ বছর পর জয়ের স্বাদ পাওয়া দলে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:০২
Share:

রাহুল গাঁধীর সামনে এ বার তৃতীয় ‘হার্ডল’ মধ্যপ্রদেশে। কমল নাথ, না কি জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া— মুখ্যমন্ত্রী কে?

মধ্য়প্রদেশের পর রাজস্থানেও পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়ার দায়িত্বটা ঠেলে দেওয়া হল হাইকমান্ডের কোর্টে। দুই রাজ্যেই ক্ষমতাসীন বিজেপিকে মসনদ থেকে হঠিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কে হবেন তাঁদের সরকারের মুখ, তা বেছে নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি দুই প্রদেশ কংগ্রেসই। নেতা বাছার ‘বল’টা ঠেলে দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর কোর্টে।

Advertisement

বৃহত্তম দল হওয়া যাবে, নাকি দ্বিতীয় স্থানেই থেকে যেতে হবে— প্রায় ২০ ঘণ্টা টানাপড়েনের শেষে বুধবার মধ্যপ্রদেশে বিজেপির চেয়ে পাঁচটি আসন বেশি জিতল কংগ্রেস। তবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না। পরে মায়াবতী এবং অখিলেশের সমর্থন পেয়ে সেই বাধাও টপকে গেল কংগ্রেস। কিন্তু তার পর রাহুল গাঁধীর সামনে এসেছে আরও একটি ‘হার্ডল’। কমল নাথ, নাকি জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া— কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী? যা নিয়ে আপাতত জোর টানাপড়েন শুরু হয়েছে ১৫ বছর পর জয়ের স্বাদ পাওয়া দলে। পরিষদীয় দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাই মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিল, রাহুল গাঁধীই বেছে দিন মুখ্যমন্ত্রী।

সাধারণত ভোটগণনার আগের রাতটা বিনিদ্র কাটে রাজনৈতিক নেতাদের। মধ্যপ্রদেশে এ বার যে রকম টানটান লড়াই ছিল, তাতে শিবরাজ-কৈলাস-প্রভাত ঝা বা কমল-দিগ্বিজয়-জ্যোতিরাদিত্যরা যে সোমবার রাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারেননি, তা আঁচ করা শক্ত নয়। কিন্তু দুই শিবিরকেই বিনিদ্র কাটাতে হয়েছে মঙ্গলবার রাতটাও। একেবারে ফোটোফিনিশ লড়াই, ইনিংসের শেষ ডেলিভারিটা পর্যন্ত স্নায়ু টানটান, প্রায় শেষ রাতে গিয়ে ফলাফল চূড়ান্ত হওয়া এবং ম্যাজিক ফিগার অল্পের জন্য অধরা থেকে যাওয়া— মঙ্গলবারটা এ ভাবেই কেটেছে। রাতভর প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতরে ঘাঁটি গেড়ে পড়ে থেকেছেন রাজ্য কংগ্রেসের তিন প্রধান স্তম্ভ কমল নাথ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং দিগ্বিজয় সিংহ। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। দল যাতে না ভাঙে, তা নিশ্চিত করতে জোর তৎপরতা দেখা গিয়েছে। নিজের জোরে ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছনো না গেলে কী ভাবে সংখ্যা জোগাড় করতে হবে, তা নিয়ে কৌশল ছকে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ভাঙা-গড়ার খেলা খেলে বিজেপি-কে সরকার যে গড়তে দেওয়া হবে না মধ্যপ্রদেশে, কংগ্রেস নেতাদের রাতভর তৎপরতায় তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। বুধবার সকালে নিশ্চয়ই অনেকটা স্বস্তিতে ছিলেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু বেলা গড়াতেই আবর্ত জটিল হতে শুরু করে দেয় মধ্যপ্রদেশে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমল নাথ আর প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার শিবিরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে জোর টানাপড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে। এই দু’জনের মধ্যে থেকে কোনও এক জনকে বেছে নেওয়া কংগ্রেস সভাপতির পক্ষে অত্যন্ত কঠিন এই মুহূর্তে।

আরও পড়ুন: এই প্রবণতা থাকলে লোকসভায় ১০০ আসন খোয়াতে পারে বিজেপি?

কমল নাথ— রাহুলের পিতামহী ইন্দিরা গাঁধীর আমল থেকে ছিন্দওয়াড়ার সাংসদ তিনি। ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় একটানা সাংসদ (মাঝে ১৯৯৬-’৯৮ পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন না)। নিজের জেলায় তিনি মসিহা, তিনি কিংবদন্তী, তিনি প্রবাদপ্রতিম। কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন একাধিক বার, বরাবর গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ঠাঁই পেয়েছেন, মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেসে কয়েক দশক ধরে অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিরাজ করেছেন। কিন্তু কখনও প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হননি। ১৫ বছর ধরে বিরোধী আসনে থাকা কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরাতে কমল নাথের উপরে ভরসা রেখেছিলেন রাহুল গাঁধী, প্রথম বারের জন্য মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন প্রবীণ শিল্পপতি। যে কুখ্যাত অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য বার বার মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসকে শোচনীয় ভাবে হারতে হচ্ছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, সেই কোন্দল থামিয়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং দিগ্বিজয় সিংহকে সঙ্গে নিয়ে দলের ঐক্যবদ্ধ ছবি তুলে ধরার দায়িত্ব ছিল কমল নাথের উপরে। কোষাগারের সঙ্কটে ভুগতে থাকা কংগ্রেসক তহবিল জোগানোর দায়িত্ব ছিল কমল নাথের উপরে। সব দায়িত্বই সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছেন ছিন্দওয়াড়ার মুকুটহীন রাজা। টিকিট বণ্টন পর্বে কোন্দল অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। ঐক্যবদ্ধ ভাবে এবং নির্বিঘ্নে প্রচারাভিযান সারতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন কমল নাথ। এখন মুখ্যমন্ত্রী পদ তাঁকে না দেওয়া রাহুল গাঁধীর পক্ষে খুব কঠিন।

কিন্তু অন্য দিকে রয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসের যে দু’-তিন জন নেতা, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া তাঁদের এক জন। নিজের খাসতালুক গ্বালিয়র এবং গুণা-শিবপুরীতে কংগ্রেসের অবিসংবাদী নেতা জ্যোতিরাদিত্য। বাবা তথা প্রয়াত কংগ্রেস নেতা মাধবরাও সিন্ধিয়ার উত্তরাধিকার বহন করছেন জ্যোতিরাদিত্য। গোটা মধ্যপ্রদেশেই কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রবল জনপ্রিয়তা তাঁর। এমনকী কমল নাথের ছিন্দওয়াড়াতেও ‘সিন্ধিয়াজি’র নামে কপালে হাত ঠেকাতে দেখা যায় কংগ্রেস কর্মীদের। গ্বালিয়র রাজ পরিবারের যে সদস্যরা বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিতে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখও তিনিই। কমল নাথকে সভাপতিত্ব দিয়েছেন রাহুল, জ্যোতিরাদিত্য বিন্দুমাত্র বিরোধিতা করেননি। রাহুল চেয়েছেন,নির্বাচনের মরসুমে কোনও রকম অনৈক্যের ছবি যেন তৈরি না হয়। জ্যোতিরাদিত্য তা নিশ্চিত করতে যত্নবান থেকেছেন। তাঁর অনুগামীদের অনেকে টিকিট পাননি বলে অসন্তোষ ছিল। কিন্তু তার আঁচ দলীয় সদর দফতরের বাইরে যেতে দেননি, কমল নাথকে সব রকম সহযোগিতা করেছেন। ১৫ বছর পরে মধ্যপ্রদেশের মসনদে কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরে কিন্তু জ্যোতিরাদিত্যও নিজের মতো করে সক্রিয় হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে তিনি নেই— এমনটা যেন না ভাবা হয়, স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছেন গ্বালিয়ারের জয়বিলাস প্রাসাদের অধীশ্বর।

আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী বাছতে ‘স্বয়ম্বর’ সভা করছে কংগ্রেস

গ্বালিয়র এবং চম্বল এলাকার ৩৪টি আসনের মধ্যে ২৩টা জিতেছে কংগ্রেস— জোর দিয়ে মনে করিয়ে দিতে শুরু করেছেন সিন্ধিয়া। মুখ্যমন্ত্রিত্বের জন্য তিনি কি প্রস্তুত? এ প্রশ্নের জবাবে অত্যন্ত সপ্রতিভ জবাব দিচ্ছেন, ‘‘অবশ্যই, দল যদি সেই দায়িত্ব দেয়, তা হলে অবশ্যই প্রস্তুত। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মধ্যপ্রদেশের সেবা করতে পারা অত্যন্ত সম্মানজনক দায়িত্ব হবে আমার জন্য।’’ ইঙ্গিত অত্যন্ত স্পষ্ট।

অতএব, জটিল সন্ধিক্ষণে রাহুল গাঁধী। অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্তের মুহূর্ত তাঁর জন্য। কংগ্রেস সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বাছাই নিয়ে কয়েক দফা কথা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে দলে। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এ কে অ্যান্টনির উপস্থিতিতে হওয়া সেই বৈঠকে দিগ্বিজয় সিংহের সমর্থন কমল নাথের দিকে গিয়েছে বলে খবর। সে ক্ষেত্রে কমলের পাল্লাই এখনও পর্যন্ত ভারী। কিন্তু কোনও একটা নামে চূড়ান্ত সিলমোহর দেওয়ার কাজটা রাহুল গাঁধীকেই করতে হবে। কারণ কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে কাউকে বেছে নেওয়া যায়নি। পরিষদয়ী দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নেতা বেছে নেওয়ার ভার কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির উপরেই ছাড়া হচ্ছে।

(ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদেরদেশবিভাগে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement