জয়ের মুখ: কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলট (মাঝে) এবং অশোক গহলৌতের উচ্ছ্বাস। রয়েছেন কে সি বেণুগোপালও। জয়পুরে মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
জয়সলমেরের প্রত্যন্ত সেই গ্রামে এ বার স্বপ্ন বোঝাই হেলিকপ্টারটি নামবে কিনা, তা ভবিষ্যতই বলবে। যে হেলিকপ্টার থেকে এক সময় নেমে এসে গরিব গ্রামবাসীদের সমস্যা মিটিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অজ গাঁ গুলিতে ‘বিজলি’ কবে আসবে, সেটি বলার সময়ও এখন আসেনি।
তবে যে পরিবর্তনের আকাঙ্খা মরুরাজ্যের প্রতিটি জনপদ, হাটেবাজারে দেখা গিয়েছিল, তার সঙ্গে সঙ্গতি রাখল বিধানসভা ভোটের ফলাফল। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, প্রথম দিকে কিছুটা অগোছালো থাকলেও ভোটের শেষ সপ্তাহে তেড়েফুঁড়ে মাঠে নেমেছিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব এবং বসুন্ধরা রাজে। আজকের ফলাফলে বিজেপির সেই মরণকালে হরিনামের প্রতিফলনও কিছুটা রয়েছে। তারা পেয়েছে ৭৫টি আসন, যা পাঁচ বছর রাজত্ব করার পরে রাজস্থানের মতো রাজ্যে কম নয়। বহু আসনে দু’দলের মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি নয়। তবে এটাও ঘটনা যে, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে রাজস্থানে বহু বছর ধরেই জয়ী এবং বিজিত প্রার্থীর মধ্যে ফারাক খুব বেশি থাকে না।
তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, বসুন্ধরার প্রতি সার্বিক অনাস্থা এবং মেরুকরণের গেরুয়া প্রয়াসকে প্রত্যাখ্যান— কংগ্রেসের জয়ের অন্যতম প্রধান দু’টি কারণ। ‘রাম’ নামে উদ্বেল হয়নি ‘সতী’র রাজ্য। এটা ঠিকই যে, উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের মতো রাজ্যের তুলনায় রাজস্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের সংখ্যা কম। কিন্তু উন্নয়নের কোনও ফলিত মডেল সামনে দিতে না-পারা বসুন্ধরা সরকার প্রবল ভাবেই হিন্দুত্বের মডেলকে তুলে ধরেছিল। যে সব এলাকায় মুসলমান ভোটব্যাঙ্কের শতকরা হার উল্লেখযোগ্য, ভোট ‘কভার’ করতে গিয়ে সেখানে দেখেছি, অটোয় বসে বিজেপির ভোট-দাদারা মাইক ফুঁকে বলেছেন, ‘‘আমাদের মুসলমান ভোটের দরকার নেই। ওদের ভোট নেওয়া মানেই বিভিন্ন অনাচারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।’’ এখানেই না থেমে, তিন-চার প্রজন্ম আগে ধর্মান্তরিত হওয়া মুসলমানদের প্রচ্ছন্ন হুমকির স্বরে ‘ঘর ওয়াপসি’-র বার্তাও দিয়েছে তারা। অলওয়ারে গো-তাণ্ডবের সঙ্গে যুক্তদের বেকসুর ছেড়ে দেওয়া অথবা টংক-এ (যেখান থেকে জিতলেন শচিন পাইলট) মুসলমান প্রার্থীকে দিয়ে হনুমানভজনা করানোর লাভ কিন্তু বিজেপি ঘরে তুলতে পারল না।
আরও পড়ুন: রামনামে লক্ষণ খারাপ, তবে কি এ বার খয়রাতি?
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এ বার কয়েকটি বিষয় গোড়া থেকেই কংগ্রেসের পক্ষে থেকেছে। বসুন্ধরার প্রতি হতাশা যার অন্যতম। চিরকালের বিজেপি অনুগত রাজপুত ভোটেও কিছুটা চিড় ধরাতে পেরেছে কংগ্রেস। তবুও যে স্কোরবোর্ডে বিজেপিকে একেবারে ধরাশায়ী দেখাচ্ছে না, তারও কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এই উৎসবের আবহের মধ্যেও নাম গোপন রাখার শর্তে বললেন, ‘‘কংগ্রেসের টিকিট বণ্টনের প্রক্রিয়াটি খুব মসৃণ ছিল না। এখানে অশোক গহলৌতজি এবং শচিন পাইলটের মধ্যে চাপা রেষারেষি কাজ করেছে। যে নির্দলেরা জিতেছেন, তাঁদের মধ্যে দশ জন কংগ্রেস থেকে টিকিট না পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। এঁরা সবাই গহলৌতের ঘনিষ্ঠ।’’ ওই নেতার মতে, এঁদের টিকিট দেওয়া হলে স্কোরবোর্ডে কংগ্রেসের চেহারাটা আরও ঝকঝকে দেখাত। জুটত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা।