তিন মাস আগে অসমের এক মহিলা আইপিএস কর্তার নাম জেনেছিল গোটা দেশ। তিনি সংযুক্তা পরাশর। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ এনেছিলেন সংযুক্তা।
সাদা পোশাকে কর্তব্যরত সংযুক্তার গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জেরা করেছিল দিল্লি পুলিশ। এমনকি পরিচয় দেওয়ার পরও বিশ্বাস করতে চায়নি তিনি একজন আইপিএস কর্তা।
চাকরি সূত্রে পাওয়া সরকারি গাড়ি নিজেই চালাচ্ছিলেন সংযুক্তা। দিল্লি পুলিশের ওই আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছিলেন, ‘লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে দিল্লি পুলিশের মানসিকতার বদল হওয়া দরকার। কারণ ওঁদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আমার বয়সি একজন মহিলা যিনি আইপিএস অফিসারের গাড়ি নিজেই চালাচ্ছেন, তিনি নিজেও একজন আইপিএস হতে পারেন।’
দিল্লি পুলিশের তথাকথিত আভিজাত্য এবং ‘দিল কি পুলিশ’ ট্যাগলাইন নিয়েও কটাক্ষ করেছিলেন অসমের ওই আইপিএস। টুইটারে বলেছিলেন, ‘অভিজাত দিল্লি পুলিশের এই মানসিকতা এবং সংস্কৃতির প্রভাব আকছার সমাজেও দেখা যায়।’
দেশের বিদ্বজ্জনেরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও সংযুক্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর প্রতি দিল্লি পুলিশের আচরণের নিন্দা করেছিলেন সকলে। দিল্লি পুলিশও এই অভিযোগের কোনও জবাব দিতে পারেনি।
তবে সংযুক্তা বরাবরই সাহসী। সত্য কথনে আর সঠিক কাজে তিনি কোনও দিন পিছিয়ে আসেননি।
অসমে একা ১৬ জন জঙ্গিকে মেরেছিলেন। দেড় বছরে গ্রেফতার করেছিলেন ৬৪ জন বোড়ো জঙ্গিকে।
ইউপিএসসিতে দেশে ৮৫তম স্থান অধিকার করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিলও করেছেন। চাইলে আরামের চাকরি করতে পারতেন। কিন্তু সংযুক্তা কঠিন পথ বেছে নিয়েছিলেন।
২০০৮ সালে সংযুক্তার প্রথম পোস্টিং হয় মাকুমে। অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ডান্ট পদের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। বোড়ো জঙ্গিদের সঙ্গে তখন প্রায়সই সংঘর্ষ হচ্ছে বাংলাদেশের শরণার্থীদের। তাদের সামলাতে সংযুক্তাকে পাঠানো হয় উদলগিরিতে।
আইপিএস কর্তা হিসেবে প্রথমেই এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ঘাবড়ে যাননি সংযুক্তা। বরং তাঁর সহকর্মীরা বলেন, প্রতিদিন হাতে একে ৪৭ নিয়ে অসমের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। নেতৃত্ব দিতেন সিআরপিএফ জওয়ানদের দলকে। এ ভাবে প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করেছেন, দেড় বছরে ৬৪ জন জঙ্গিতে গ্রেফতারও করেছিলেন তিনি।
তাঁর ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। সংযুক্তার জন্যই অসমের বোড়ো উপদ্রুত এলাকাগুলিতে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তাঁরই নেতৃত্বে অসমে সেনা কনভয়ের উপর হামলাকারী জঙ্গিদেরও গ্রেফতার করে অসম পুলিশ। এমনকি ইভ টিজারদের দৌরাত্ম্য কমাতে তাঁর পদক্ষেপও প্রশংসিত হয়েছিল।
সাদা পোশাকে মহিলা পুলিশকর্তাদের স্কুল-কলেজের সামনে মোতায়েন রাখার কথা বলেছিলেন সংযুক্তা। তাঁর পরামর্শ কাজে দিয়েছিল। হাতেনাতে ধরা পড়েছিল বহু অপরাধী। আবার রাস্তায় হেলমেট পরে গাড়ি চালালে বাইক চালককে লজেন্স উপহার দিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
অসমের মানুষের কাছে সংযুক্তা ঘরের মেয়ে। তবে ভালবেসে তাঁকে ডাকা হয় ‘লৌহ কন্যা’ বলে।
ছোট থেকেই খেলাধুলোয় আগ্রহী সংযুক্তা। ভাল সাঁতারু ছিলেন। আবার পড়াশোনাতেও মেধাবী। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পর সংযুক্তা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়েন। পরে এমফিল এবং আমেরিকার বিদেশ নীতি নিয়ে ডক্টরেটও করেছেন।
তিন বছর অসমের জোরহাটের পুলিশ সুপার ছিলেন। পরে সোনিপতেও একই দায়িত্ব সামলেছেন। আপাতত দিল্লিতে কর্মরত তিনি।
বয়স ৪১। নয় বছরের একটি পুত্র সন্তান আছে সংযুক্তার। বিয়ে করেছেন অসমেরই আর এক আইপিএস কর্তা সন্দীপ কক্করকে। যদিও স্বামীর সঙ্গে বছরে খুব কমই দেখা হয় তাঁর।
অবসরে ছেলের সঙ্গেই সময় কাটান সংযুক্তা।
পিঙ্ক ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন। সুযোগ পেলে দৌড়তে আর সাঁতার কাটতে ভালবাসেন। তাঁর টুইটারে এই ভালবাসার ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেকে ‘অপরাধী’ বলে মন্তব্য করেছেন সংযুক্তা। কারণ দৌড়নো এবং সাঁতারের প্রতি তাঁর ভালবাসা না কি একটু বাড়াবাড়ি রকমের বেশি !