মা তাহামিনা খাতুনের সঙ্গে প্রার্থী ফারুক খান। —নিজস্ব চিত্র।
ছেলে ভোটের প্রার্থী। কিন্তু ভোটের দিন সকালে মায়ের আশীর্বাদটুকুই শুধু পেয়েছেন ফারুক খান, ভোট পাননি। কারণ, গত ২৪ বছর ধরেই ভোটদানের অধিকার হারিয়েছেন মা তাহামিনা খাতুন। সরকারি খাতায় তিনি ‘ডি ভোটার’ বা সন্দেহজনক ভোটার!
অসমের বরপেটা জেলায় জনিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী ফারুকের বাড়ি ভেরাগাঁও গ্রামে। ছেলে প্রার্থী আর মায়ের ভোটাধিকার নেই- এমন পরিবার রাজ্য তো বটেই হয়তো দেশেও বিরল।
১৯৯৭ সালে অসমে ডি-ভোটার চিহ্নিতকরণ শুরু হয়। ফারুক জানান, প্রথম ধাক্কাতেই তাঁর মাকে সরকার ডি-ভোটার তকমা দেয়। তারপর থেকে প্রায় আড়াই দশক যুদ্ধ চালিয়েও তরুণ ফারুক মাকে সরকারের চোখে ‘সন্দেহমুক্ত’ করতে পারেননি।
ফারুক জানান, কে, কেন ভোটার তালিকায় মায়ের নামে ‘ডি’ জুড়েছিল— সেই জবাবটাও দিতে পারেনি পুলিশ বা জেলা প্রশাসন। নাছোড়বান্দা ফারুক তথ্যের অধিকার আইনে আর্জি জানিয়ে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কেন তাহামিনা ডি-ভোটার? জবাব এসেছে এ নিয়ে সরকারের হাতে কোনও তথ্য নেই!
২০১৯ সালে ফারুক আম আদমি পার্টির হয়ে জনিয়ার উপ-নির্বাচনে লড়েছিলেন। সেই বছর কলগাছিয়া সার্কলের সার্কল অফিসার তাঁদের বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে জানান, ১৯৯৭ সালে তাহামিনাকে ডি-ভোটার করা হলেও কলগাছিয়া রাজস্ব চক্রের নথিতে কিন্তু তাহামিনার নামে ‘ডি’ যুক্ত থাকার উল্লেখ নেই। কিন্তু নির্বাচনের
ক্ষেত্রে ভোটার তালিকাই শেষ কথা। তাই ভোটাধিকার ফিরে পাননি তাহামিনা। নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা সাফ জানিয়েছেন, মামলার রায় না পেলে ‘ডি’ ঘুচবে না। তাহামিনার স্বামী ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। স্বামীর পেনশন পাচ্ছেন তিনি। স্বামী বা নিজের বাপের বাড়ির পরিবারেও কারও নাম ডি-ভোটারের তালিকায় নেই।
নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, অসমে বর্তমানে ডি-ভোটারের সংখ্যা ১,০৮,৫৯৬ জন। তার মধ্যে সর্বাধিক ডি-ভোটার আছেন বরপেটা জেলাতেই। জনিয়ায় ভোটার তালিকায় ডি-ভোটারের সংখ্যা ৪৪৭১।
ফারুক জানান, শুধু তাঁদের গ্রামেই ১১০ জন ডি-ভোটার। তার মধ্যে তাহামিনা-সহ ২৬ জন ডি-ভোটারের পরিবার একজোট হয়ে ইতিমধ্যেই সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন। পরের শুনানি ১৩ এপ্রিল। ফারুকের বক্তব্য, “সরকার যারই আসুক, অবিলম্বে বরাবরের জন্য ডি-ভোটারের প্রহসন বন্ধ হওয়া দরকার। আর কতদিন প্রকৃত ভারতীয়দের ভোটাধিকার একটা অযৌক্তিক অক্ষরের খোঁচায় ঠেকিয়ে রাখা হবে?”