রবি কান্নন। ছবি: সংগৃহীত।
ষোলো বছর আগে শিলচরে এসেছিলেন স্ত্রী-কন্যা, মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে। বৃদ্ধ বাবা বিমানবন্দর থেকে শিলচরের নির্ধারিত আবাসনে এসেছিলেন অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর পাশে রেখে। স্ত্রী চেন্নাইয়ে আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সব ছেড়ে কোলের শিশুকে নিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কেন?
কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের ডিরেক্টর রবি কান্নন বহু দিন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। স্পষ্ট জবাব মেলেনি। স্ত্রী সীতালক্ষ্মী কান্নন বলেছেন, “কেন জানি মনে হয়েছিল, যাঁদের তোমাকে খুব বেশি প্রয়োজন, তাঁদের কাছেই তো যাবে।” যেখানে ডাক্তারি শিক্ষা, সেখানেই চাকরি করছিলেন কান্নন। তা-ও আবার নিজের শহরে। তাই চেন্নাইয়ের প্রতিষ্ঠিত ক্যানসার হাসপাতালটি ছাড়তে চাইছিলেন না। আবার প্রত্যন্ত শিলচর থেকে আসা বিশিষ্টজনেদের মুখের ওপর না বলতেও বাধছিল। বিষয়টি ছেড়ে দেন পরিবারের সদস্যদের ওপর। সবাই এক বাক্যে বলেন, “তোমার শিলচরেই যাওয়া উচিত।” সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন কান্নন।
২০২৩ সালের রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের জন্য মনোনীত চার জনের এক জন কান্নন। অসমের তিনিই প্রথম ম্যাগসাইসাই জয়ী। ২০২০ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রীতে সম্মানিত করে। ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের জন্য কান্ননের নাম ঘোষণা হতেই শিলচর-সহ গোটা বরাক উপত্যকায় আনন্দের বন্যা। আনন্দের শরিক রিকশাচালক, দিনমজুরেরাও। কান্ননের অবশ্য রুটিনে ফারাক নেই। আউটডোরে বসে রোগীর পরিজনের চোস্ত হিন্দির সঙ্গে ভাঙা বাংলায় আশ্বস্ত করছিলেন, ‘চিন্তা করিও না, শুধু হসপিটাল আসতে লাগব।’ কিন্তু তাঁকেই কেন? নির্বাচকমণ্ডলীর বক্তব্য, কোনও ক্যানসার রোগী যেন অর্থের অভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত না হন, সেটিই লক্ষ্য কান্ননের। সেই লক্ষ্যপূরণে তাঁর ৪৫১ জন মেডিক্যাল-নন মেডিক্যাল ‘সহকর্মী’ নিজের সেরাটা দিয়ে চলেছেন। কান্ননের কথায়, “সব সম্মানই হাসপাতালের। আমি প্রধান বলে শুধু গ্রহণ করি।”