গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পাঁচ দিন বন্দি থাকার পরে শেষ পর্যন্ত দু’টি মামলাতেই জামিন পেয়ে মুক্ত হলেন অসমের সাংবাদিক দিলওয়ার হুসেন মজুমদার। কারামুক্তির পরে সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, ভয় পাওয়া দূরের কথা, দ্বিগুণ সাহস ও সততার সঙ্গে সরকারকে প্রশ্ন করতে থাকবেন।
অসম সমবায় অ্যাপেক্স ব্যাঙ্কের দুর্নীতি সংক্রান্ত আন্দোলনের খবর করতে যাওয়ার পরেই মঙ্গলবার পুলিশ দিনভর তাঁকে পানবাজার থানায় বসিয়ে রেখে রাতে গ্রেফতার করে। ওই ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ও চেয়ারম্যান বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ ফুকন।
১২ ঘণ্টা ধরে তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, আইনজীবীকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তারও উত্তর দিতে পারেনি পুলিশ। পরে বলা হয়, ব্যাঙ্কের এক নিরাপত্তাকর্মীর উদ্দেশে জাতবিদ্বেষী মন্তব্য করায় তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। পরের দিন অতিরিক্ত দায়রা আদালত তাঁকে জামিন দিলেও পুলিশ দ্বিতীয় মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করে। বলা হয়, তিনি ব্যাঙ্কের ফাইল লুট করার চেষ্টা করেছেন, হুলুস্থুল করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা একধাপ এগিয়ে দাবি করেন, দিলওয়ার খবর করতে নয়, ব্যবসার জন্য ব্যাঙ্কের কাছ থেকে মোটা টাকা ঋণ নিতে গিয়েছিলেন। তিনি এ-ও দাবি করেন, তাঁর সরকার নিউজ় পোর্টালের সাংবাদিকদের স্বীকৃতি দেয় না। অবশ্য হিমন্তর বক্তব্য অসার প্রমাণিত হয়। কারণ ব্যঙ্কের এমডি-ই সাংবাদিকদের জানান, আন্দোলন নিয়ে বক্তব্য জানতেই এসেছিলেন দিলওয়ার। সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট আইন তুলে ধরে দেখান, সংবাদ পোর্টালের সরকারি স্বীকৃতির কোনও প্রয়োজন নেই।
গুয়াহাটি তথা রাজ্যের সাংবাদিক মহল ঐক্যবদ্ধ ভাবে দিলওয়ারের মুক্তির দাবিতে পথে নামে, মিছিল করে, রাত পর্যন্ত থানার সামনে ও শুনানির সময়ে আদালতের বাইরে রাস্তায় বসে ধর্না চলে। গত রাতে মুখ্য দায়রা আদালতে জামিন পান দিলওয়ার। এ দিন সন্ধ্যায় কারাগার থেকে বেরিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে দিলওয়ার বলেন, ‘‘আমার সততায় বিশ্বাস রেখে পাশে দাঁড়ানোর জন্য সব সাংবাদিক, আইনজীবী, নাগরিক সমাজকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আমি ফের সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করে, খবর করে, সততার সঙ্গে কাজ করে সেই আস্থার মূল্য দেব।’’ তিনি জানান, পুলিশ তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্কুলের সার্টিফিকেট, এলএলবি সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট,
ল্যাপটপ-সহ ৫৩টি নথিপত্র ও সামগ্রী নিয়ে গিয়েছে।
হিমন্ত এবং তথ্য ও জনসংযোগ মন্ত্রী পীযুষ হাজরিকা দাবি করেন, যে হেতু দিলওয়ারের ফেসবুকে ডাম্পার কেনার ছবি আছে, বিরাট বাড়ির ছবি আছে, কাপড়ের দোকানের ছবি আছে এবং তিনি আইনজীবী, তাই দিলওয়ার সাংবাদিক হতে পারেন না। দিলওয়ার বলেন, ‘‘ঋণ নিয়ে দুই মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য দু’টি ডাম্পার কিনলেও সেই ব্যবসা চালাতে পারিনি। ছবিটিও পৈতৃক বাড়ির। স্ত্রীর গয়না, ঘর বন্ধক দিয়ে কাপড়ের দোকান খুলে দিয়েছি স্ত্রীকে। যে হেতু এলএলবি করেছি তাই কাজের পরে আইন চর্চা করি। সিনিয়রদের সাহায্য করি। আইনের ডিগ্রি থাকায় আমার কাজে সুবিধা হয়। সব জেনেশুনেই আইনজীবীরা এক টাকাও না নিয়ে আমার হয়ে লড়েছেন।’’