ফাইল চিত্র।
নাগা চুক্তির রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক প্রভাব নিয়ে আলোচনার জন্য প্রথম বার এনএসসিএন আইএম নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা নেডা জোটের মাথা হিমন্তবিশ্ব শর্মা। গত কাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে নাগাল্যান্ডের সর্বদলীয় সরকার ও শান্তি আলোচনা নিয়ে আলোচনা চালান হিমন্ত। আজ সকালে দিল্লি থেকে ডিমাপুরে এসে প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই প্যাটনদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এর পর চুমুকেডিমা পুলিশ কমপ্লেক্সে আইএমের প্রধান নেতা থুইংগালেং মুইভা-সহ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা চালান হিমন্ত। বৈঠকে ছিলেন রিও-ও। পরে স্থানীয় এক রিসর্টে ফের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য বিজেপি সভাপতি তেমজেন ইমনা আলং ও বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন হিমন্ত। ওই রিসর্টেই রয়েছেন শান্তি আলোচনার নতুন মধ্যস্থতাকারী এ কে মিশ্র। হিমন্ত পরে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তর-পূর্বে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান। সেই উদ্দেশে শান্তি আলোচনা নিয়ে আজ এনএসসিএন আইএম নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিনময় করি। রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সর্বদলীয় সরকার ও আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।”
এনএসসিএনের সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম প্রধান দাবি, নাগা অধ্যুষিত এলাকাগুলি এক করে বৃহত্তর নাগালিম তৈরি করা। সব রাজ্যেই এখন বিজেপি সরকার রয়েছে। তাই শাহ নেডা-প্রধান হিমন্তকে এ ক্ষেত্রে আপস মীমাংসার ভার তুলে দেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।
আজকের বৈঠকের পরে অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই ভিতরের আলোচ্য বিষয় নিয়ে মুখ খোলেনি কোনও পক্ষই। হিমন্ত শুধু বলেন, “আমি নিয়মিত নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও অন্যান্য উত্তর-পূর্বের রাজ্যে যাতায়াত করি। এ বারের সফরও রাজনৈতিক।” এনএসসিএন নেতা আরএইচ রাইজিং বলেন, “নতুন চুক্তিতে জনতাকে প্রতারণা করা হলে সেই চুক্তি অতীতের ১৬ দফা চুক্তি ও শিলং চুক্তির মতোই ব্যর্থ হতে বাধ্য। তাই জনতার দাবি মেনে সর্বসম্মক চুক্তিই হতে হবে।”
অবশ্য গোটা বিষয় নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছে কংগ্রেস। অসম কংগ্রেসের সভাপতি ভূপেন বরা বলেন, মানুষকে অন্ধকারে রেখে কোনও ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা চলবে না। বরা প্রশ্ন তোলেন, কোন পদাধিকারে অসমের মুখ্যমন্ত্রী নাগা জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন? মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভা ও বিধানসভার অনুমতি না নিয়ে কী ভাবে হিমন্ত বৃহত্তর নাগাল্যান্ড নিয়ে এনএসসিএনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন?
এ দিকে, শুধু আইএম নয়, আলফা স্বাধীনের প্রধান পরেশ বরুয়ার সঙ্গেও সরাসরি শান্তি আলোচনা শুরু করার ভার হিমন্তের উপরে অর্পণ করল কেন্দ্র। ৪২ বছর পরে, প্রথমবার অসমের কোনও মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি আলফার সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালাবেন। পরেশ বহু বারই বলেছেন, হিমন্তই শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও সমাধানসূত্র বার করার পক্ষে আদর্শ ব্যক্তি হতে পারেন। হিমন্তকে মধ্যস্থতা করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। হিমন্ত জানান, গত কাল বৈঠকের পরে শাহ আলোচনা শুরুর সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অসম সরকার আলফার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক ভাবে কথা চালাচ্ছিল। আমি পরেশ বরুয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চেয়েছিলাম। তা পেয়েছি। কথা ইতিবাচক পথে এগোলে কেন্দ্র আলোচনার অংশ হবে।”