স্বাস্থ্যবিধি-মুখোশ-দূরত্ব কিছুরই তোয়াক্কা না করে অসমবাসীর বিহুর আনন্দে গা-ভাসানো দেখে আশঙ্কায় স্বাস্থ্য-দফতর। ছবি: পিটিআই।
করোনার বাড়াবাড়িকে সঙ্গী করেই অসমে শুরু হয়ে গেল বিহু উৎসব। গরু বিহুর দিনে সামাজিক ভাবে গো-স্নানের পর্ব তো চলল। গুয়াহাটির জাজেস ফিল্ডে মুকলি বিহুতে মাতল জনতা। পাশের লতাশিলেও চলল বিহুর নৃত্যগীত। বিভিন্ন স্থানে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে রাত ১টা পর্যন্তই চলল বিহুর অনুষ্ঠান। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে করোনাভীতি নস্যাৎ করে, স্বাস্থ্যবিধি-মুখোশ-দূরত্ব কিছুরই তোয়াক্কা না করে অসমবাসীর বিহুর আনন্দে গা-ভাসানো দেখে আশঙ্কায় স্বাস্থ্য-দফতর। সরকার যেখানে নির্দেশ দিয়েছে রাত ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে সেখানে কাল রাত পৌনে ১টায় অনুষ্ঠান শেষ করে জুবিন গর্গ মঞ্চ থেকেই বলেন, “নিয়মভাঙা প্রথম মানুষ সর্বদা আমিই।’’ জনপ্রিয় গায়কের এই আচরণে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, নিয়ম ভাঙা সব গায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর হবে।
করোনার বাড়াবাড়ি রুখতে এ বার থেকে অসম ও উত্তর-পূর্ব বাদে অন্য যে কোনও রাজ্য থেকে অসমের যে কোনও বিমানবন্দরে আসা সব যাত্রীর বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা করা হবে। র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ হলে অবস্থা বুঝে হোম-আইসোলেশন বা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা হবে। নেগেটিভ হলে করাতে হবে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা। সেই বাবদ যাত্রীকে দিতে হবে সরকার নির্ধারিত মূল্য। এর পর হাতে ছাপ মেরে যাত্রীকে যেতে দেওয়া হবে। পরীক্ষার ফল না আসা পর্যন্ত তাঁকে থাকতে হবে কোয়রান্টিনে।
আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে ৭০০ টাকা ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা নিতে পারবে বেসরকারি হাসপাতাল। এই নির্দেশের পরেই বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিগুলি করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। শহরের ২৩টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারকে চিঠিতে জানিয়েছেন প্রযুক্তিগত বিভিন্ন কারণে এত কম টাকায় করোনার পরীক্ষা সম্ভব নয়। হয়রান হতে হচ্ছে নাগরিকদের। কিছু বেসরকারি হাসপাতাল পরীক্ষার জন্য ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।
অসমে ১১ মে থেকে এইচএসএলসি ও হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা শুরু। ৮৭৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রের সব কটিতেই কোভিড আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য থাকছে আইসোলেশন কেবিন। শিলচর এনআইটির চূড়ান্ত সেমিস্টারের দুই পরীক্ষার্থী সোমবার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই তাঁদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার কথা। এনআইটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের কোথাও যাওয়ার তথ্য ছিল না! দ্রুত সকলের কোভিড পরীক্ষা করানোর জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় গুয়াহাটির ৬টি স্কুলে অন্তত ২০ জন ছাত্রছাত্রী ও বেশ কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা করোনায় আক্রান্ত। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে বিহুর ছুটির পরে আপাতত স্কুল ফের বন্ধ রাখার কথা বিবেচনা করছে শিক্ষা দফতর।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে অফলাইন ক্লাস শুরুর কথা ছিল। কোভিড বেড়ে চলায় বাইরের ছাত্রদের আসতে বারণ করা হয়েছে। এর মধ্যেই কোভিডে মারা গেলেন ডিব্রুগড় বিসিপিএল-এর চিফ ম্যানেজার মানবজ্যোতি দুয়রা (৪৫)। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিডের টিকার সরবরাহ নেই বলে অভিযোগ আসছে। তাই বহু ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফার টিকাপ্রদানের কাজ থমকে।