এঁরা মনে করছেন, ১০ মার্চ পাঁচ রাজ্যে ভোট গণনার পরে আশানুরূপ ফল না হলে (যার আশঙ্কাও এঁদের বদ্ধমূল) দলে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছোটখাট বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যার ফলে এক সঙ্গে দল ছাড়ার হিড়িক পড়ে যেতে পারে।
অশ্বিনী কুমার।
অশ্বিনী কুমার খুব জনপ্রিয় জননেতা ছিলেন, এমন কথা কেউ বলেন না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান এই আইনজীবী নেতৃত্বের কাছে এত দিন এতটাই গুরুত্ব পেয়ে এসেছেন যে, তাঁকে কংগ্রেসের ‘তাত্ত্বিক নেতা’ বলতেন অনেকে। সেই অশ্বিনীর দলত্যাগ ও তার প্রতিক্রিয়া আরও এক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, পাঁচ রাজ্যের ভোটে প্রতাপশালী বিজেপিকে মোকাবিলা করতে নামা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে চিড়টা ক্রমেই যেন ফাটলে পর্যবসিত হচ্ছে।
মৃদুভাষী অশ্বিনীর দলত্যাগে প্রথম মুখ খোলেন কাশ্মীরের কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজ়াদ, যিনি দল ছাড়তে পারেন বলে ঘোর আশঙ্কা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটা বড় অংশের। আজ়াদ বলেন, “এই ভাবে একের পর এক নেতার দল ছেড়ে যাওয়াটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।” আজ়াদের ধুয়ো ধরে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের উপনেতা আনন্দ শর্মা এবং লোকসভার সাংসদ মণীশ তিওয়ারি প্রায় এক যোগেই বলেন, “দলীয় নেতৃত্বের উচিত বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বেক্ষণ করা।” অর্থ্যাৎ এই ভাবে একের পর এক নেতার দলত্যাগের বিষয়টি তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ বলে নজরে আনলেন এবং এই ঘটনার দায় নেতৃত্বের ঘাড়ে ফেললেন।
ঘটনাচক্রে আজ়াদ, আনন্দ শর্মা এবং মণীশ তিওয়ারী তিন জনেই দলীয় নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর দাবি তোলা জি-২৩ বলে পরিচিত গোষ্ঠীর সদস্য। কিন্তু তাঁদের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমতি জানাচ্ছেন বহু কংগ্রেস নেতা যাঁরা কোনও দিনই ওই গোষ্ঠীর ছায়া মাড়াননি। আনন্দ শর্মাদের চেয়ে এগিয়ে তাঁদের আশঙ্কার মাত্রাটি আরও গভীর। এঁরা মনে করছেন, ১০ মার্চ পাঁচ রাজ্যে ভোট গণনার পরে আশানুরূপ ফল না হলে (যার আশঙ্কাও এঁদের বদ্ধমূল) দলে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছোটখাট বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যার ফলে এক সঙ্গে দল ছাড়ার হিড়িক পড়ে যেতে পারে।
আপাতত অশ্বিনী কুমারের দলত্যাগকে বড় বিষয় হিসাবে প্রচার করে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে কামান দাগতে শুরু করেছেন সংস্কারপন্থী জি-২৩-এর নেতারা। ভুপিন্দার সিংহ হুডা টুইটে বলেছেন, ‘অশ্বিনী কুমারের মতো সুভদ্র মানুষের দল ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দুঃখের এবং দুর্ভাগ্যের। স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবার থেকে এসেছিলেন তিনি।’ মণীশ তিওয়ারি লিখেছেন, ‘মনমোহন সিংহের সরকারে অশ্বিনী কুমারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে আমার অনেক কিছুতেই হয়তো মতের মিল ছিল না। কিন্তু সাধারণ কর্মীও দল ছেড়ে চলে গেলে, নেতৃত্বের উচিত অন্তর্বেক্ষণ করা।’