—প্রতীকী ছবি।
মহিলারা শিক্ষিত হওয়ার কারণেই পরিবারপিছু সন্তান কম হচ্ছে যা ভারতের জনসংখ্যার জন্য ভাল নয়, এ কথা বলে বিতর্ক সৃষ্টি করলেন আরএসএস ঘনিষ্ঠ স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন। একটি প্রবন্ধে তিনি ওই দাবি করলেও, চলতি মাসের অন্তর্বর্তী বাজেটে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও জনবিন্যাসের পরিবর্তনের ফলে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার মোকাবিলার পথ খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
বিরোধীদের মতে, এক দিকে সরকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য কমিটি গড়ছে। অন্য দিকে অশ্বিনী দাবি করছেন, দেশের জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। এটা স্ববিরোধী। ওই প্রবন্ধে নারীবিদ্বেষ স্পষ্ট। পাশাপাশি বোঝানো হয়েছে হিন্দুরা শিক্ষিত হওয়ায় ক্রমশ জন্মহার কমছে। তুলনায় মুসলিম সমাজে জন্মহার অনেক বেশি। যদিও প্রবন্ধে সরাসরি তা বলা হয়নি।
অশ্বিনী তাঁর প্রবন্ধে দাবি করেছেন, ভারতে জন্মহার ক্রমশ কমছে। এক জন মহিলা গড়ে যত জন সন্তানের জন্ম দেন তাকেই জন্মহার বলা হয়ে থাকে। অশ্বিনীর দাবি, ভারতের মতো দেশে জন্মহার যদি ২.১ থাকে তাহলে জনসংখ্যা এক থাকার কথা। কিন্তু ২০২১ সালের পরেই ওই জন্মহার নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ১.৯৯-এ। তিনি এর কারণ হিসেবে পরিবার পিছু একের বেশি সন্তান বা একেবারেই সন্তান না নেওয়াকে দায়ী করেছেন।
তাঁর মতে, মহিলার শিক্ষার হার যত বেড়েছে তত জন্মহার কমতে দেখা গিয়েছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি দাবি করেছেন, স্নাতক বা তাঁর চেয়ে বেশি শিক্ষিত মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৯৯১ সালে জন্মহার ছিল ১.৬২। যা ২০১১ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ১.৪০। অন্য দিকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৯৯১ সালে জন্মহার ছিল ২.০৮ এবং ২০১১ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ১.৭৭।
তাঁর দাবি, যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নন সেই শ্রেণির মধ্যে জন্মহার অনেক বেশি। তৃণমূলের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মতে, ‘‘তা হলে কি ধরে নিতে হবে গেরুয়া শিবির মহিলাদের স্বশক্তিকরণে বিশ্বাস করে না। তারা কি চায় না মহিলারা শিক্ষিত হোক?’’
বিরোধীদের মতে, নিজের প্রবন্ধে কোনও ধর্মীয় শ্রেণির কথা না বললেও মহাজন আসলে কৌশলে বিশেষ এক ধর্মীয় শ্রেণির দিকে আঙুল তুলতে চেয়েছেন। কারণ সঙ্ঘ মনে করে, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে মূলত দায়ী মুসলিমেরাই। তাদের আশঙ্কা মুসলিমদের জন্মহার এতটাই বেশি যে আগামী দিনে ভারতবর্ষে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন হিন্দুরাই। সেই কারণেই জন্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে সঙ্ঘ নেতাদের। ঠিক যে কারণে এ বার অন্তর্বর্তী বাজেটে ওই কমিটি গঠনের পথে হেঁটেছে সরকার। মহিলা অধিকার নিয়ে কাজ করেন আইনজীবী ফ্ল্যাবিয়া অ্যাগনেস। তাঁর মতে, ‘‘বাস্তবে হিন্দুদের মতোই জন্মহার কমছে মুসলিমদেরও। আসল সমস্যা হল অর্থনৈতিক। পরিবারে যাতে রোজগেরে হাত বাড়ে সে কারণেই মুসলিম বা জনজাতি সমাজে জন্মহার বেশি।’’ আর ভারতের মতো দেশে হিন্দুদের ছাপিয়ে যাবে মুসলিম জনসংখ্যা, এই তত্ত্বের পিছনে সারবত্তা আছে বলে মনে করেন না তিনি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি-র অধ্যাপক লেখা এস চক্রবর্তী শিক্ষার সঙ্গে জন্মহারের তুলনার পরিবর্তে সামগ্রিক ভাবে মহিলা ভ্রূণ হত্যা রোধের উপরে জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, শিক্ষিত হওয়ার সঙ্গে জন্মহার কমে আসার যে তত্ত্ব এখানে উঠে এসেছে তা আরও সতর্ক ভাবে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ ভারতের মতো দেশে আসল সমস্যা হল ০-৬ বছর বয়সে প্রতিকূল লিঙ্গ অনুপাত। ০-৬ বছরের জনসংখ্যার লিঙ্গ অনুপাত বুঝিয়ে দেয় ভারতে লিঙ্গ বৈষম্য জন্মের আগে থেকে শুরু হয়। পুত্রসন্তান কামনায় ভারতের লক্ষ লক্ষ কন্যাসন্তান নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আয়েষা কিদোয়াইয়ের বক্তব্য, ‘‘গর্ভধারণ করবেন কি না তা স্থির করার অধিকার রয়েছে মহিলাদের। তাতে ওঁর (অশ্বিনী) সমস্যা হলে আমার কিছু বলার নেই।’’