ভোটের অঙ্কে কড়া হিন্দুত্বের দাওয়াই সিঙ্ঘলের

হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্যে বিধানসভার ভোট এগিয়ে আসতেই সঙ্ঘ-বিজেপির ঝুলি থেকে ফের বেরিয়ে এল দ্বিমুখী রণকৌশলের তাস। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদী যখন জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সব স্তরের উন্নয়নের কথা প্রচার করছেন, তখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অশোক সিঙ্ঘলের মুখে ফের উঠে এল উগ্র হিন্দুত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্যে বিধানসভার ভোট এগিয়ে আসতেই সঙ্ঘ-বিজেপির ঝুলি থেকে ফের বেরিয়ে এল দ্বিমুখী রণকৌশলের তাস। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদী যখন জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সব স্তরের উন্নয়নের কথা প্রচার করছেন, তখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অশোক সিঙ্ঘলের মুখে ফের উঠে এল উগ্র হিন্দুত্ব।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনের সময় উত্তরপ্রদেশে এই কৌশল নিয়েই চলেছিলেন মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ। সে সময় সঙ্ঘ নেতারা তলে তলে হিন্দুত্বের প্রচার চালাচ্ছিলেন। আর মোদীর মুখে ছিল শুধুই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। অমিত বিজেপির সভাপতি হওয়ার পর সেই কৌশলই ফিরে এল। অমিত যখন উত্তরপ্রদেশের অঙ্ক মেনে বাকি রাজ্যের ভোটের ঘুঁটি সাজাচ্ছেন, তখন সিঙ্ঘলের কথায়, “লোকসভা ভোট দেখিয়ে দিয়েছে, দেশের মুসলমানদের ছাড়াই কেন্দ্রে সরকার গড়া যায়।” সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, “এর আগে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে তাদের তোষণ করত। কিন্তু এখন মুসলমানদের উচিত হিন্দু মনোভাবকে সম্মান করা। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, ৩৭০ ধারার মতো বিষয়ে হিন্দুদের মতে সায় দেওয়া উচিত তাদের।”

বিরোধী দলগুলি সিঙ্ঘলের এই মন্তব্যের বিরোধিতায় সরব হলেও খুশি বিজেপির একাধিক শরিক দলের হিন্দুত্ববাদী নেতারা। বিনয় কাটিয়ার থেকে শিবসেনার সঞ্জয় রাউত অনেকেই এই মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। যদিও মোদী সরকারের কোনও মন্ত্রী সরাসরি এই মন্তব্যের বিরোধিতা বা সমর্থন না করে এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেছেন, সিঙ্ঘলের বক্তব্যের সঙ্গে সরকার আদৌ এক মত নয়। মোদী সরকার সকলের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই এগোচ্ছে। তবে বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সিঙ্ঘল যা বলেছেন, তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। এ বারের ভোটে সংখ্যালঘুদের একাংশের ভোটও পেয়েছে বিজেপি। যদিও সিংহভাগ এখনও বিজেপিকে সমর্থন করেননি। তা সত্ত্বেও সরকার তাঁদের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ কর্মসূচি তৈরি করেছে।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, সঙ্ঘ ও বিজেপির কিছু কোর এজেন্ডা রয়েছে, যেটি অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারে রূপায়ণ করা সম্ভব হয়নি। এ বারে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার পর সেটি বাস্তবায়িত হবে, এমন ভাবনা রয়েছে সঙ্ঘ ও দলের একাংশের মধ্যে। সিঙ্ঘল সেটাই তুলে ধরেছেন।

Advertisement

মোদী সরকারের এক শীর্ষ সদস্যের বক্তব্য, মোদী আরএসএসের কিছু প্রস্তাব মেনেছেন। সঙ্ঘের কথা শুনে রাজনাথ সিংহকে মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব দিয়েছেন। রাম মাধবের মতো সঙ্ঘ নেতাকে দলে টেনেছেন। কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, রাম নাইকের মতো সঙ্ঘ নেতাদের রাজ্যপাল করেছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বসাচ্ছেন। এমনকী শীর্ষ স্তরে আমলা নিয়োগের সময়ও সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে অল্প হলেও সঙ্ঘের এজেন্ডাকে প্রতিফলিত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু মোদী আগামী পাঁচ বছর কখনওই উগ্র হিন্দুত্বের পথে হাঁটবেন না। ওই নেতার কথায়, “মোদী এমন কোনও পদক্ষেপ করবেন না, যাতে পাঁচ বছর পর ফের ক্ষমতায় ফেরার ক্ষেত্রে হোঁচট খেতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের কৌশল হিসেবে সঙ্ঘের পক্ষ থেকে যদি হিন্দুত্বকে উস্কে দেওয়া হয়, তা হলে ক্ষতি কী?”

সরকার যতই হিন্দুত্ব প্রশ্নে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করুক, বিরোধীরা কিন্তু এ নিয়ে মোদীকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি, অম্বিকা সোনির মতো নেতারা বলেন, “মোদীর আসল রং প্রকাশ পাচ্ছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও গণতন্ত্রে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখাই ধর্ম।” সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, “বরাবরই মেরুকরণের রাজনীতি করে এসেছে বিজেপি। আর্থিক নীতির প্রশ্নে ইউপিএ-র সঙ্গে বিজেপির কোনও ফারাক নেই। বিজেপির বাড়তি যে বিষয়টি রয়েছে, তা হল মেরুকরণের এজেন্ডা!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement