দিল্লির বাড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সচিন পাইলট। ছবি: পিটিআই।
আপাতত শেষ হাসি হাসলেন অশোক গহলৌত। আপাতত হাসি বসুন্ধরা রাজের মুখেও।
সচিন পাইলটের বিদ্রোহে আপাতত যবনিকা পতনের পরে রাজস্থানে কংগ্রেস, বিজেপির দুই নেতানেত্রীই খুশি।
সচিনকে দলে ফেরালেও তাঁর দাবি মেনে গহলৌতকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরাচ্ছে না কংগ্রেস। বরং বিজেপির সঙ্গে এক মাস ধরে যোগাযোগ রেখে চলার পরে সচিন কংগ্রেসে ফিরতে বাধ্য হওয়ায় গহলৌতের পায়ের তলার জমিই আরও শক্ত হল। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, এমনিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক গহলৌতের সঙ্গে ছিলেন। তাঁর সরকার ফেলতে ব্যর্থ হওয়ায় সচিনেরই বিশ্বাসযোগ্যতা ধাক্কা খেল।
উল্টো দিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজস্থানে সরকার ফেলতে চাইলেও, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের তাতে ঘোর আপত্তি ছিল। সূত্রের খবর, তিনি গত সপ্তাহে দিল্লিতে এসে দলের সভাপতি জে পি নড্ডা ও রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকে সে কথা জানিয়ে দেন। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে রাজস্থান বিজেপিতে সচিনের প্রবেশ চাননি বসুন্ধরা। দলের ৭২ জন বিধায়কের মধ্যে অন্তত ৪০ জন বসুন্ধরার সঙ্গে থাকায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তাঁর কথা ফেলতে পারেননি।
ফলে পরিস্থিতির চাপে সচিনের 'ঘর ওয়াপসি' হলেও তাঁর সঙ্গে গহলৌতের বিবাদ মিটবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। আজ সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে জয়পুরে ফিরেছেন সচিন। তার আগেই দুপুরে জয়পুর থেকে জয়সলমেরে চলে যান গহলৌত।
সচিনের প্রধান দাবি ছিল, গহলৌতকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে হবে। এ দিন জয়পুর রওনা হওয়ার আগে সচিন বলেন, তাঁর প্রধান দাবিদাওয়া তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বের সামনে রেখেছেন। তাঁর আশা, খুব শীঘ্রই প্রতিকার মিলবে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, সচিন চাইছেন, এখন না-হলেও ২০২৩-এ বিধানসভা ভোটের আগে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়া হোক। আর প্রতিহিংসাবশত গহলৌত যেন তাঁর অনুগামীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা না করেন। গহলৌতই পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শুধু বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করবে।’’
গাঁধী পরিবার বিদ্রোহী সচিনকে ঘরে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে আজ গহলৌত জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও বিধায়কদের ক্ষোভ থাকলে তিনি তা খতিয়ে দেখবেন। সচিনকে ‘নিকম্মা’ আখ্যা দিয়ে গহলৌত অভিযোগ করেছিলেন, সচিন বিজেপির সঙ্গে মিলে নিজের দলের সরকার ফেলার চেষ্টা করছেন। আজ অবশ্য তিনি এ বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন।
আর বিজেপির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে সচিনের মন্তব্য, ‘‘অভিযোগ তোলা খুবই সহজ।’’ তাঁর দাবি, তিনি নীতিগত প্রশ্নে লড়াই করছিলেন। রাজস্থানের বিজেপি সভাপতি সতীশ পুনিয়ার মন্তব্য, গহলৌতই আসল ‘ভিলেন’। গহলৌত মুচকি হেসে বলেছেন, ‘‘বিজেপির এমন মুখ পুড়েছে যে গোটা দেশে মুখ দেখানোর জো নেই।’’
মুখে দুই কংগ্রেস নেতা যুদ্ধ-বিরতি ঘোষণা করলেও, তিক্ততা যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তার পরে সচিনের পক্ষে রাজস্থানে কাজ করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সচিন আজ ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিনি রাহুল গাঁধীর কথায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে পাঁচ বছরের পরিশ্রমের পরে দলকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। সচিন বলেন, ‘‘অল ওয়াজ নট ওয়েল। গহলৌতকে মুখ্যমন্ত্রী করে আমাকে উপমুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্তও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু কাজের পরিসর দেওয়া হয়নি।’’ শেষে তাঁর বিরুদ্ধে সরকার ফেলার চেষ্টার অভিযোগে দেশদ্রোহের মামলা করায় দিল্লিতে অভিযোগ জানানো ছাড়া উপায় ছিল না বলেই সচিনের দাবি। সোমবার রাতে কংগ্রেসের ওয়ার রুমের বৈঠকে সচিন ও তাঁর অনুগামী বিধায়কেরা প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা, আহমেদ পটেল এবং কে সি বেণুগোপালকে বিস্তারিত সব জানান।
যদিও এআইসিসি-র এক নেতার মন্তব্য, ‘‘সচিন মুখে যা-ই বলুন, তিনি যে বিজেপির সঙ্গে মিলে সরকার ফেলার চেষ্টা করেছিলেন, তা মানুষ বুঝে গিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতাই টোল খেয়েছে।’’ কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, গহলৌতের সঙ্গে বিবাদ ধামাচাপা দিয়ে রাখতে সচিনকে দিল্লিতেই কোনও দায়িত্ব দিতে হবে। সচিন নিজে বলেছেন, তিনি কোনও পদ চাননি। তাঁর দায়িত্ব দলই ঠিক করবে।