আসারাম বাপু। ফাইল চিত্র।
আট মাসের মধ্যে দেশের আরও এক স্বঘোষিত ধর্মগুরুর কারাদণ্ড হল ধর্ষণের ঘটনায়। রাম রহিমের পর আসারাম বাপু। বছর পাঁচেক আগে নিজের আশ্রমে এক নাবালিকা স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় বুধবার আসারামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল জোধপুরের তফসিলি জাতি-জনজাতি আদালত। ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এই মামলায় আসারামের দুই সঙ্গী শিল্পী এবং শরদকে। পাঁচ অভিযুক্তের বাকি দু’জনকে অবশ্য বেকসুর খালাস করে দিয়েছে আদালত।রায় শুনে আদালতের মধ্যেই কেঁদে ফেলে আসারাম।
অন্য দিকে ধর্ষিতা কিশোরীর বাবা বলেছেন, ‘‘অবশেষে ন্যায় বিচার মিলল। আজ আমার মেয়ে খুশি।’’
ঘটনা ২০১৩ সালের। রাজস্থানে জোধপুরের কাছে মানাই এলাকায় আসারামের একটি আশ্রম আছে। সেখানেই উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরের ১৬ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছিল আসারাম বাপু। অভিযোগ, অশুভ শক্তির হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার নাম করে ওই কিশোরীকে আসারামের হাতে তুলে দিয়েছিল শিল্পী নামে এক শিষ্যা। ওই বছর ৩১ অগস্ট আসারামকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জেলেই রয়েছে আসারাম। ১২ বার জামিনের আবেদন করেছে সে। খারিজ হয়েছে প্রতি বারই।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আর্জি জানানো হবে বলে তার আশ্রমের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
গুজরাতের সুরাতেও আসারাম ও তার ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। সেখানে অভিযোগকারী দুই বোন। এই মামলারও রায় বেরোনোর কথা কিছুদিনের মধ্যেই। আসারামের মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে গত চার বছরে এই দুই মামলার ৯ জন সাক্ষীর উপর হামলা হয়েছে। মারা গিয়েছেন ৩ জন।
আসারামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণার আগে রীতিমতো দুর্গের চেহারা নিয়েছিল জোধপুর। রাজস্থান ছাড়াও বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল গুজরাত ও হরিয়ানায়। গত বছর গুরমিত রাম রহিমের শাস্তি ঘোষণার পর, ছক কষে এমন হাঙ্গামা বাধানো হয়েছিল যে, ৩৬ জনের প্রাণ যায়। নষ্ট হয় ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। দাপটের বিচারে আসারাম বাপু-ও তো কম কিছু নয়। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার চারশর বেশি আশ্রম। ১০ হাজার কোটি টাকার উপর সম্পত্তি। রয়েছে বিশাল ভক্তকুল। অতএব আশঙ্কার মেঘ ছিলই। গুরমিতের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়েছিল— এ ক্ষেত্রেও আদালত বসে জেলের মধ্যেই। অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় জেল চত্বর। রায় ঘোষণার আগে এ দিন গ্রেফতার করা হয় তার ৬ ভক্তকে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জোধপুর জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। শহরে সব বাস টার্মিনাস ও রেল স্টেশনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। হোটেল ও ধর্মশালায় কারা আসা-যাওয়া করছেন, নজর রাখা হচ্ছে সে দিকেও। শহরের বাইরে পল রোডে আসারামের আশ্রম। অশান্তির আশঙ্কায় সেটি ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে।