আসাদুদ্দিন ওয়েইসি।
বিহারে মহাগঠবন্ধনের আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণ করলেন। বাংলায় তৃণমূল নেতৃত্বের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিলেন। হায়দরাবাদের বানজারা হিলসের আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বাংলা লাগোয়া বিহারের জেলাগুলির মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে বড় রকম ভাগ বসালেন।
ওয়েইসির মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম) বিহারে ২০টি আসনে লড়ে ৫টি আসন দখল করল। এর মধ্যে ৪টিই পশ্চিমবঙ্গের গা-ঘেঁষা। আরও অনেক বেশি আসনে এমআইএম ‘মহাগঠবন্ধন’-এর মুসলিম ভোটে ভাগ বসানোর বিজেপির সুবিধে হয়ে গিয়েছে। এ সব আসনেরও অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, উত্তর দিনাজপুরের লাগোয়া। বিহারে ভোটের প্রচারে গিয়েই ওয়েইসি ঘোষণা করেছেন, আগামী বছর তিনি বাংলার বিধানসভার ভোটের ময়দানে নামবেন। যার পুনরাবৃত্তি তিনি আজও করেছেন। বিহারে আরজেডি এবং কংগ্রেসের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ওয়েইসি ভাগ বসানোয় রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত সীমাঞ্চলেই বিজেপি তথা এনডিএ জোট ভাল ফল করেছে। ভোট কাটা প্রসঙ্গে ওয়েইসির বক্তব্য, ‘‘ভোটারেরা কি বাঁধা দাস? সব সময়েই কি একই দলকে ভোট দিতে হবে? ’’ প্রয়োজনে মহাগঠবন্ধনকে সমর্থন করা নিয়ে ওয়েইসির বক্তব্য, ‘‘চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হলে এ নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়।’’ পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর বিধানসভা ভোটে ওয়েইসির দলের জন্য বিহারের ফলের পুনরাবৃত্তি হবে কি না, তা নিয়ে বাংলার শাসক শিবিরে অঙ্ক কষা শুরু হয়েছে। কারণ বিহার ঘেঁষা উত্তর দিনাজপুরের সঙ্গে কলকাতার উর্দুভাষী এলাকাতেও হালফিলে এমআইএম সক্রিয়।
পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া বিহারের আটটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। কিষাণগঞ্জ, পূর্ণিয়া, কাটিহার জেলার এই আটটি আসন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর বা মালদহের লাগোয়া। বিহারে এমআইএম এই আটটি আসনেই লড়েছে। বিহারের ভোটের ফল বলছে, এমআইএম যে পাঁচটি আসনে জিতেছে, তার মধ্যে এই এলাকার চারটি আসন রয়েছে। এর মধ্যে কিষাণগঞ্জের কোচাধামন, পূর্ণিয়ার অমৌর, বৈসি বাংলার উত্তর দিনাজপুর লাগোয়া। কাটিহারের বাহাদুরগঞ্জ উত্তর দিনাজপুর ও মালদহ লাগোয়া। সেটিও এমআইএম জিতে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: লাইভ: বিহারে সরকার গড়তে চলেছে এনডিএ, শুভেচ্ছা মোদী-শাহের, এক নম্বরে তেজস্বীর দল
শুধু তা-ই নয়। উত্তর দিনাজপুরের লাগোয়া ঠাকুরগঞ্জের মতো একগুচ্ছ আসনে মুসলিম ভোট নিজের ঝুলিতে টেনে কোথাও আরজেডি, কোথাও কংগ্রেসের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এমআইএম। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে তাই লোকসভায় কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এমআইএম-কে ‘ভোট কাটা পার্টি’ বলে তকমা দিয়েছেন। তেলঙ্গানার পার্টি এমআইএম নিজের রাজ্যে ১১৯টি বিধানসভার মধ্যে ৯টি আসনে লড়ে। তারা বিহারে দু’ডজন আসনে লড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই কংগ্রেস এমআইএম-কে ‘বিজেপির বি টিম’ বলে দোষারোপ করেছিল। বিজেপি যে ‘ওয়েইসি সাহেবের পার্টি’-কে কৌশলে কাজে লাগিয়ে বিহারে সাফল্য পেয়েছে, অধীর তা মেনে নিয়েছেন। একইসঙ্গে ওয়েইসি সম্পর্কে অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকেও সতর্ক করে দিয়েছেন।
বিহার ভোটে এমআইএম-এর এই দাপট দেখে বাংলায় তৃণমূল শিবিরেও জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের হিসেব অনুযায়ী, পাঁচটি আসনে জেতার পাশাপাশি আরও অন্তত সাত থেকে আটটি আসনে ওয়েইসি ভোটের ফলের গতিমুখ ঘুরিয়ে দিয়েছেন। তা হলে বাংলায় কী হবে? তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ওয়েইসির প্রভাব মূলত উর্দুভাষী মুসলিমদের মধ্যে। বাংলার মুসলিমদের মাত্র ৬ শতাংশ উর্দুভাষী। বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে তাঁর প্রভাব এখনও অনুপস্থিত। তা ছাড়া বাংলার মুসলিম সমাজ তাদেরই ভোট দেয়, যারা বিজেপিকে হারাতে পারবে। সেই হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মুসলিম ভোট পাবেন। ওয়েইসি নন।
আরও পড়ুন: ‘অসহায় মুখ্যমন্ত্রী’ হবেন, না কি ‘সন্ন্যাস’ নেবেন নীতীশ কুমার?
ওয়েইসি বিহারে একা না লড়ে মায়াবতীর বিএসপি, উপেন্দ্র কুশওয়াহার আরএলএসপি-র সঙ্গে জোট গড়েছিলেন। এই জোটই বিরোধী মহাগঠবন্ধনের ভোট কাটবে বলে আঁচ করা গিয়েছিল। সেটাই হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম আসনে প্রার্থী দিয়ে ওয়েইসিই সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছেন।