—প্রতীকী ছবি।
লোকসভা নির্বাচন শেষ হতেই জম্মু-কাশ্মীরে ভোটের বাদ্য বাজিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। গতকাল ওই রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশে একটি বিবৃতি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোটের জন্য প্রতীক বণ্টন করার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ভোট প্রস্তুতি শুরু করতেই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাওয়ার বিষয়টি।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে কেন্দ্র। আলাদা করা হয় লাদাখকে। রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয় জম্মু-কাশ্মীর। যদিও তার আগে থেকেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছিল উপত্যকায়। জম্মু-কাশ্মীরে শেষবার ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেবার স্থানীয় দল পিডিপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রথমবার জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গড়ে বিজেপি। ২০১৬ সালে পিডিপি-র মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদ প্রয়াত হলে তাঁর মেয়ে মেহবুবা মুফতি মুখ্যমন্ত্রী হন। যদিও ২০১৯ সালের ১৮ জুন সেই সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয় বিজেপি। সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে পিডিপি। জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। তারপরেই সংসদে বিল পাশ করিয়ে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় জম্মু-কাশ্মীরের।
প্রায় এক দশক ধরে নির্বাচন না হওয়ায় বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালত একটি রায়ে কেন্দ্রকে জানায়, এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে। সেই মতো ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি শুরু করে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের বিধানসভাগুলির সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ গত বছরেই হয়ে গিয়েছে। মনে করা হয়েছিল, হয়তো লোকসভা ভোটের সঙ্গেই জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচন সেরে ফেলবে কমিশন। কিন্তু তা হয়নি। তবে লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার সময়েই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছিলেন, খুব শীঘ্রই জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচন হবে। গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকার পাবে সেখানকার মানুষ। পরবর্তী পদক্ষেপে এবার লোকসভার ফলপ্রকাশ হতেই জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিল কমিশন। গতকাল কমিশন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরে সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করানোর প্রশ্নে তারা দায়বদ্ধ। পাশাপাশি বলা হয়েছে, সেখানে যে আঞ্চলিক দলগুলি রয়েছে, তাদের প্রতীক বণ্টনের আবেদনপত্র দ্রুত জমা দিতে হবে। কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, উপত্যকায় লোকসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। গত চার দশকের মধ্যে এবারের লোকসভায় ভোট পড়েছে রেকর্ডসংখ্যক। যা বুঝিয়ে দিচ্ছে, সেখানকার মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জুড়তে প্রস্তুত।
জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দেওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলি। কারণ, বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাওয়ার বিষয়টি জড়িত। মোদী সরকার রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে
নেওয়ার সময়েই জানিয়েছিল, ভবিষ্যতে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হতেই রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি কেন্দ্র পালন করে কি না, এখন সেটাই দেখার।