নতুন রাজ্যপাল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর। ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের নতুন রাজ্যপাল হিসাবে রমেশ বইসকে নিযুক্ত করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ‘অব্যাহতি’ দেওয়া হল রাজ্যের বিদায়ী রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারিকে। রমেশ এত দিন ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন। ঝাড়খণ্ড থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হচ্ছে মরাঠাভূমে। মহারাষ্ট্র ছাড়াও আরও ১২টি রাজ্যে রাজ্যপাল এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে উপরাজ্যপাল বদল হয়েছেন। কোশিয়ারি বিগত কয়েক দিন ধরেই পদ ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করছিলেন। পদ থেকে ‘মুক্ত’ করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও অনুরোধ করেছিলেন। অবশেষে তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করলেন রাষ্ট্রপতি।
গত ২৩ জানুয়ারি কোশিয়ারি নিজের টুইটার হ্যান্ডলে লেখেন, “প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মুম্বই সফরে আমি তাঁর কাছে সমস্ত রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। জানিয়েছি, বাকি জীবনটা আমি পড়া, লেখা এবং অন্য কাজে ব্যয় করতে চাই।” তার কিছু দিন আগেই ছত্রপতি শিবাজিকে নিয়ে ‘অসংবেদনশীল এবং অবমাননামূলক’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছিল কোশিয়ারির বিরুদ্ধে। তার পরই জল্পনা শুরু হয়, শিবাজি-বিতর্কে বিজেপির সহযোগী শিন্ডেসেনা এবং বিরোধীদের চাপে কোশিয়ারিকে ইস্তফা দিতে বলবে কেন্দ্র। বিজেপির একটি সূত্রের তরফে এ-ও দাবি করা হয় যে, মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের দাবি মেনেই রাজ্যপাল পদ ছাড়ার বার্তা পাঠানো হয়েছে কোশিয়ারিকে। গত নভেম্বরে অওরঙ্গাবাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বরেণ্য মরাঠা ব্যক্তিদের উদাহরণ দিতে গিয়ে কোশিয়ারি বলেছিলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে বৈগ্রহিক চরিত্রের অভাব নেই। প্রাচীন যুগে ছিলেন ছত্রপতি শিবাজি। পরবর্তী সময়ে ভীমরাও অম্বেডকর। বর্তমান সময়ে নিতিন গডকরী।’’ ওই মন্তব্যের পরেই বিরোধী শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে শিবির)-র তরফে মরাঠি ভাবাবেগে আঘাত করার জন্য রাজ্যপালের ইস্তফা দাবি করা হয়। ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে’ একই দাবি তোলে বিজেপির সহযোগী মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা গোষ্ঠীও। শিন্ডেসেনার প্রথম সারির নেতা তথা বিধায়ক সঞ্জয় গায়কোয়াড় বলেন, ‘‘অম্বেডকর এবং নিতিনের সঙ্গে এক আসনে বসিয়ে মরাঠা জাতির আরাধ্য শিবাজি মহারাজের অবমাননা করছেন রাজ্যপাল।’’
রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রাক্তন সেনা আধিকারিক ত্রিবিক্রম পারনাইক অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল হচ্ছেন। সিকিমের নতুন রাজ্যপাল হচ্ছেন লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্য। রমেশ বইসের পর ঝাড়খণ্ডের নতুন রাজ্যপাল হচ্ছেন সিপি রাধাকৃষ্ণন। হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপাল হচ্ছেন শিবপ্রতাপ শুক্ল। অসমের রাজ্যপাল হচ্ছেন গুলাবচাঁদ কাটারিয়া। অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস আব্দুল নাজ়ির। অন্ধ্রপ্রদেশের বিদায়ী রাজ্যপাল বিশ্বভূষণ হরিচন্দন ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপাল হচ্ছেন। ছত্তীসগঢ়ের বিদায়ী রাজ্যপাল সুশ্রী অনুসুইয়া উইকে মণিপুরের রাজ্যপাল হচ্ছেন। মণিপুরের বর্তমান রাজ্যপাল লা গণেশন নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল হচ্ছেন। বিহারের বিদায়ী রাজ্যপাল ফাগু চৌহান মেঘালয়ের রাজ্যপাল হচ্ছেন। হিমাচল প্রদেশের বর্তমান রাজ্যপাল রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আরলেকর বিহারের নতুন রাজ্যপাল হতে চলেছেন। অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করা বিডি মিশ্রকে লাদাখের উপরাজ্যপাল করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
নতুন রাজ্যপাল নিয়োগ কিংবা বদল প্রথামাফিক একটি কাজ হলেও বরাবরই এর সঙ্গে রাজনৈতিক অনুষঙ্গ জড়িয়ে থাকে। চলতি বছরেই বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, কর্নাটক, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম, রাজস্থান, তেলঙ্গানা এবং জম্মু ও কাশ্মীরে। ভোটমুখী রাজ্যগুলির মধ্যে নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, ছত্তীসগঢ় এবং অধুনা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে রাজ্যপাল বদল হল। নতুন রাজ্যপাল হিসাবে যাঁরা নিযুক্ত হচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই বিজেপির প্রাক্তন নেতা। তবে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অরাজনৈতিক’ মুখ হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি নাজ়ির। অযোধ্যা মামলায় যে সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, তার সদস্য ছিলেন তিনি। কর্নাটক হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি না হলেও ‘নজিরবিহীন ভাবে’ সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন নাজ়ির। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই তিনি অবসরগ্রহণ করেন।