নবাব মালিক। ছবি: পিটিআই।
মাদক পাচারকারীর সঙ্গে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের যোগ রয়েছে। এবং সেই যোগোযোগের ‘প্রমাণ’ও আছে তাঁর কাছে। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন এনসিপি নেতা নবাব মালিক। সোমবার তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করবেন এবং সেখানে ঝুলি থেকে এক এক করে তথ্য বার করবেন। নবাবের এই হুঁশিয়ারির পরই জল্পনা শুরু হয়েছিল, কী তথ্য দিতে চলেছেন নবাব? অবশেষে তাঁর আক্রমণের তির গেল ফডণবীসের দিকে।
নবাব বলেন, “ফডণবীসকে সরাসরি প্রশ্ন করতে চাই। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ৫ বছর। তখন থেকেই আমি প্রশ্ন করে আসছি। স্বীকার করুন, আপনার সঙ্গে অন্ধকার জগতের যোগাযোগ রয়েছে। এক জন মন্ত্রী হিসেবে এই তথ্য সত্য কি না তা তুলে ধরা আপনার কর্তব্য ছিল।”
নবাব প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ফোর সিজনশ’ হোটেলে কারা প্রতি দিন মাদক পার্টির আয়োজন করত? তাঁর কথায়, “এক একটি টেবলের দর উঠত ১৫ লক্ষ টাকা। দেবেন্দ্র ফডণবীস, আপনি কি জানতেন না ১৫ কোটি টাকার পার্টি চলছিল?”
সমীর ওয়াংখেড়েকে নিয়ে তাঁর অবস্থান থেকে সরছেন না বলেও মঙ্গলবার জানিয়েছেন নবাব। ঘটনাচক্রে, ওয়াংখেড়েই এনসিপি নেতার জামাই সমীর খানকে মাদক মামলায় গ্রেফতার করেছিলেন। কিন্তু তাঁর জামাইকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো বলে বার বার দাবি করেছেন নবাব। এবং ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে আক্রমণের ধার আরও ঝাঁঝালো করেছেন। মঙ্গলবারও তাঁর ব্যতিক্রম হল না। নবাব বলেন, “ওয়াংখেড়ে প্রতারণা করেছেন। তিনি যে পোশাক পরছেন গত কয়েক দিন ধরে তার মূল্য ৫ কোটি টাকা। এরও প্রমাণ আছে আমার কাছে। কী ভাবে ওয়াংখেড়ে ফুলেফেঁপে উঠেছেন, তাও দেখেছে মানুষ। ওঁর মলদ্বীপ ভ্রমণ নিয়ে তদন্ত করা উচিত এনসিবি-র। জোর গলায় বলছি, সমীর প্রতারণা করেছেন।”
দীপাবলির পর ফের বড়সড় ‘চমক’ দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নবাব। তিনি বলেন, “আর বেশি অপেক্ষা নয়। দীপাবলির পর আরও চমক নিয়ে আসছি। আমার সঙ্গে অন্ধকার জগতের যোগাযোগের অভিযোগ তোলা হয়েছে। ৬২ বছর ধরে এই শহরে আছি। আমার সঙ্গে অন্ধকার জগতের যোগ রয়েছে, এই অভিযোগ তোলার ক্ষমতা নেই কারও।”
তিন দিন পেরিয়ে গিয়েছে শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খান মাদক-কাণ্ডে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু তার পরেও মাদক-কাণ্ড নিয়ে তরজা যেন থামছে না। বরং রাজনৈতিক মোড় নিয়েছে ক্রমশ। এই কাণ্ডকে কেন্দ্র করে তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপি বনাম এনসিপি নেতা নবাব মালিকের। আরিয়ান গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই ‘ভুয়ো মামলা’ বলে সরব হয়েছিলেন নবাব। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপি-র যোগসাজশের অভিযোগ তুলে বার বার আক্রমণ করেছেন নবাব। তাঁর আক্রমণের তিরে বিদ্ধ হয়েছেন মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এনসিবি)-র আঞ্চলিক অধিকর্তা সমীর ওয়াংখেড়েও।
মাদক কাণ্ডে নবাবের আক্রমণের সীমা ওয়াংখেড়ে পর্যন্ত সীমিত ছিল। কিন্তু সোমবার সেই সীমা ছাড়িয়ে এ বার তাঁর আক্রমণের নিশানায় ঢুকে পড়লেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের স্ত্রী অমরুতা ফডণবীসও। মাদক পাচারকারীর সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে অভিযোগ তুলেছেন নবাব। টুইটে সেই ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরই নবাবকে পাল্টা আক্রমণ করেন অমরুতা। তিনি বলেন, “বিগড়ে যাওয়া নবাব এখন নিজের শুধরে ওঠার ছবি প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করছেন। ওঁর বসকে গিয়ে প্রশ্নটা করা হোক না।” অমরুতা আরও জানান, তিনি কোনও রাজনীতিক নন। সমাজসেবী। যে ব্যক্তিকে নিয়ে তাঁকে জড়িয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তাঁকে এক অসরকারি সংস্থা ডেকেছিল।