অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন আগেই চলে গিয়েছেন। ক’দিন আগে গেলেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানগড়িয়া। এ বার ভারত সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনও কি বিদায়ের পথে?
নর্থ ব্লক সূত্র বলছে, অরবিন্দ নানা কারণে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপরে ক্ষুব্ধ। তাই অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দিয়ে তিনি বিদেশে চলে যেতে পারেন। অরবিন্দ আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। তাঁর কাছে নতুন করে অধ্যাপনার ডাক এসেছে। তবে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে অরবিন্দের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। কার্যত জেটলিই তাঁকে এখনও নর্থ ব্লকে আটকে রেখেছেন।
কেন ক্ষুব্ধ অরবিন্দ?
আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে। পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়ছে। আমদানি রফতানির চিত্র ভাল নয়। এমনকী নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে কার্যত সব কালো টাকাই সাদা হয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে ফিরে এসেছে। আমলাতন্ত্রের একাংশ এই পরিস্থিতির জন্য অরবিন্দকেই দুষছেন। তাঁদের কটাক্ষ, নর্থ ব্লকের এক তলায় আর্থিক উপদেষ্টার ঘরটিতে বসে তিনি সরকারকে কী উপদেশ দিলেন যে, এই পরিস্থিতি তৈরি হলো!
ঘনিষ্ঠ মহলে অরবিন্দের পাল্টা বক্তব্য, অর্থ মন্ত্রক চালাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস। সেখানে এমনকী জেটলিরও প্রায় কোনও ভূমিকা নেই। সবই নিয়ন্ত্রণ করছেন মোদী-ঘনিষ্ঠ গুজরাতি রাজস্বসচিব হাসমুখ আঢিয়া এবং তাঁর আস্থাভাজন আমলাকুল। নোট বাতিলের ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি রঘুরাম রাজনের মতের দোসর। তা ছাড়া, তিনি আর্থিক সমীক্ষা লিখেছেন বটে, কিন্তু বাজেট তৈরিতে তাঁর কোনও ভূমিকা ছিল না। আর্থিক সমীক্ষার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক ডাকাতেও ক্ষুব্ধ হন অরবিন্দ। তাঁর বক্তব্য ছিল, প্রধানমন্ত্রী তো সবই জানেন। আসলে তাঁকে (অরবিন্দকে) বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। অরবিন্দের গোসা দেখে মোদী পুরো বিষয়টি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে সরকারের বিরোধ অবশ্য নতুন নয়। ইন্দিরা গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অশোক মিত্রকে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অশোকবাবু সেই পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। কৌশিক বসুর সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতপার্থক্যও সুবিদিত। আসলে রাজনৈতিক নেতারা আর্থিক বিশেষজ্ঞদের কথামতো চলতে চান না। সেখানেই লাগে বিরোধ।
২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা দায়িত্বভার গ্রহণ করেন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। আরও দু’বছর তাঁর এই পদে থাকার কথা। এখন জেটলির অনুরোধে তিনি শেষ পর্যন্ত নর্থ ব্লকে থেকে যান নাকি রাজন ও পানগড়িয়ার পথ ধরে ‘অলবিদা’ বলেন, সেটাই দেখার।