অরবিন্দ পানাগড়িয়া। —ফাইল চিত্র।
বিদায় বেলায় অপ্রিয় সত্য কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়লেন অরবিন্দ পানাগড়িয়া।
নীতি আয়োগের বিদায়ী উপাধ্যক্ষের ‘অপরাধ’, তিনি দেশের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন— মোদী সরকারের তিন বছর পার হলেও লগ্নি বা ব্যবসায় লাল ফিতের ফাঁস বিশেষ আলগা হয়নি। এ দেশে নতুন ব্যবসা চালু করতে এখনও ১১৮ দিন লাগে। ব্যাঙ্ক থেকে পুঁজি মেলে না। ছোট সংস্থা বড় হতে পারে না।
সোমবার এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে তার খবর দেখে মাথায় হাত প্রধানমন্ত্রীর দফতরের। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নিজে নীতি আয়োগের শীর্ষকর্তাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন— এতে তো ভুল বার্তা যাবে বাইরে!
এমনিতেই ব্যবসার পরিবেশের নিরিখে বিশ্ব ব্যাঙ্ক যে তালিকা তৈরি করে, তাতে ভারতের মান বিশেষ ওঠেনি। ১৯০টি দেশের মধ্যে ভারত এখনও ১৩০-এ। গত বছরে কেবল এক ধাপ উঠতে পেরেছে ভারত। নীতি আয়োগের এ হেন রিপোর্টে ভারত আরও পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্র। আশঙ্কার প্রধান কারণ— বিশ্ব ব্যাঙ্কের শেষ রিপোর্টে বলা হয়েছিল ভারতে ব্যবসা শুরু করতে গড়ে ২৬ দিন লাগে। অথচ নীতি আয়োগের সমীক্ষা বলছে, লাগে ১১৮ দিন।
ঘটনাচক্রে, নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষের পদে বৃহস্পতিবারই পানাগড়িয়ার শেষ দিন। স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে বিদেশে অধ্যাপনার কাজে ফিরছেন তিনি। মোদীই তাঁকে নীতি আয়োগে নিয়ে এসেছিলেন। গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে মোদী তাঁর কাজের প্রশংসাও করেছেন। ফলে পানাগড়িয়াকে কাঠগড়ায় তোলা মুশকিল ছিল। মোদী নিজেই আবার নীতি আয়োগের চেয়ারম্যান। সব মিলিয়ে অস্বস্তি তাই বাড়ে।
এর পর বিবৃতি জারি করে বলা হয়— ওই রিপোর্ট নিছক একটি গবেষণাপত্র, সরকার বা নীতি আয়োগের মতামত নয়। এ-ও বলা হয়েছে, সমীক্ষাটি চালানো হয়েছিল ২০১৬-য়। শিল্পসংস্থাগুলি তাদের গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে তাতে মতামত জানিয়েছে। ওই সমীক্ষার পরে ব্যবসার পরিবেশ অনুকূল করতে বহু পদক্ষেপ করা হয়েছে।
কিন্তু এই ব্যাখ্যায় কি ক্ষত মেরামত হবে? সরকারের দুই মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ও নির্মলা সীতারামনই ঘটা করে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। এই রিপোর্ট তৈরির জন্য পানাগড়িয়ার প্রশংসাও করেছিলেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে রবিশঙ্কর বলেছিলেন, বিদায় নেওয়ার আগে এটা পানাগড়িয়ার উপহার। নীতি আয়োগের এক কর্তার মন্তব্য, সেই উপহারই এখন উপদ্রব হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে, সরকারের উচিত ছিল রিপোর্টে তুলে ধরা সমস্যাগুলি মেনে সমাধানের চেষ্টা করা। পরিবর্তে তারা সেগুলি ঝেড়ে ফেলতে চাইছে।